সাঁঝের শিশির (দ্বিতীয় পর্ব)

।।১।।

“কি গো টিকলিরাণী, খাও। কখন থেকে খাবারের থালা নিয়ে বসে আছ? তোমার প্রিয় পাস্তা করে দিলুম যে, ভাল হয়নি?”

অন্যমনস্ক টিকলি সামনের বাগানটার দিকে তাকিয়েছিল একদৃষ্টে। বিন্তি পিসির কথায় টনক নড়ল। বিন্তি পিসির আসল নাম ঠিক কি জানে না টিকলি, ছোট্ট থেকে এই নামেই ডেকে আসছে। মুখে এক চামচ তুলে বলল, “মা-র এখনও ক্লাস শেষ হয়নি?”

“এই তো, ৬টা বাজছে, এইবার ছাড়বে, তুমি খেতে খেতে চলে আসবে দিদি। তুমি খাও।” বলতে বলতেই রান্না ঘরে চলে গেল বিন্তি পিসি। “রাত্রে কি খাবে গো? ফুলকপি, বাঁধাকপি, সয়াবিন তোমার পছন্দের সব আছে। বল কি খাবে। দিদি তোমার জন্য রাবড়িও আনিয়ে রেখেছে, চিন্তা নেই। ফুলকপির তরকারি আর লুচি করি?”

“করো পিসি।” চুপচাপ খেতে লাগল টিকলি। এবারে মা-র কাছে অনেকদিন পর এল ও। ক’দিন ধরেই এত মনটা খারাপ করছিল মা-র জন্য, মা কনফারেন্সের জন্য তার উপর বাইরে ছিল ক’দিন। কতদিন মার সাথে বসে গল্প হয় না। খাবারটা শেষ করে উঠে পড়ল টিকলি। মার ঘরেই বসেছিল ও। নীচের ঘরে মা পড়াচ্ছে। বিকেলটা রোজই পড়ানো থাকে। মার ড্রেসিং টেবিলটার সামনে গিয়ে বসল ও। ছোট্ট থেকেই মার এই ড্রেসিং টেবিল, সাজগোজের জিনিসের উপর ভীষণ আকর্ষণ ছিল ওর। খুবই সাধারণ কিছু প্রসাধনী, কিন্তু টিকলির ছোট্ট বেলায় সেগুলোই অসাধারণ কোন জিনিস লাগত। এই করে মার কত লিপস্টিক, নেলপালিশ যে ও নষ্ট করেছে।

হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে নীল পারফিউমের বোতলটা তুলল ও। সোনালী আর গাঢ় নীল রঙের এই পারফিউমটাই বরাবর ব্যবহার করে মা, আর এই গন্ধটা নাকে এলেই ও বুঝত মা এবার কলেজ থেকে ফিরছে। দৌড়ে উপর থেকে নেমে আসত মাকে দেখতে। মা কি সুন্দর মিষ্টি করে সাজত, সাজত কেন এখনও তো সাজে, ছিমছাম, অসাধারণ। মা খোঁপায় একটা কিছু লাগাত, ও জানতো না কি বলে সেটাকে। বলতো মার খোঁপার ঝুমঝুমি। মা যখন ডান হাতে ঘড়িটা পরতো, আর চোখে অল্প কাজল, কপালে টিপ, আর ওই মিষ্টি রঙের লিপস্টিকটা, এই তো এইটাই, দারুণ লাগত মাকে। এখনও মা কি ভীষণ সুন্দরী, মুগ্ধ হয়ে দেখে টিকলি। আর মায়ের শাড়িগুলোর উপর বরাবর ভীষণ লোভ ওর, ওর যে নিজের শাড়ি নেই তা তো নয়, সব সময় ঠাম্মি, বৌদি, মা দিতেই থাকে পুজো পার্বণে। ওদের বাড়ি শাড়ির চলটাই বেশী। দাদু তো রীতিমত ধুতি পরেন। কিন্তু এত শাড়ি থাকলেও মায়ের শাড়িগুলোই ওর সবচেয়ে পছন্দের। সেদিনও তাই মায়ের সাদা ঢাকাই জামদানীটা…

“কিরে, আবার ড্রেসিং টেবিলের সামনে কি খুটখুট করছিস? বদ অভ্যাস আর গেল না।” বলতে বলতেই ঘরে ঢুকল অমৃতা, টিকলির মা।

মাকে দেখলেই মনটা খুব ভাল হয়ে যায় টিকলির, এই মাঝের বেশ কটাদিনের হাঁসফাঁস অবস্থা একনিমেষে হাওয়া।

“হল তোমার? বিশাল বিজি ম্যাডাম, আমি সেই কখন চলে এসেছি। ম্যাডামের আর হয় না।”

“পাকা বুড়ি। খাওয়া হয়েছে কিছু?” খাটের উপর থেকে তাকিয়াটা নিয়ে গুছিয়ে বসতে বসতে বললেন অমৃতা।

“হুম, বিন্তি পিসি পাস্তা করে দিয়েছে, একি তোমার গলায় কি হয়েছে?”

“আর বলিস না, ঐ বাইরে গেছিলাম ওখানে গিয়েই হলো, রাশ বেরিয়ে বিশ্রী অবস্থা।”

“ডাক্তার দেখাওনি কেন মা? এই জন্য আমার ভাল লাগে না, কেন তুমি একা একা থাকো এখানে? আমি এবার এখানেই থাকব।”

“আরে কালই ডাক্তার দেখিয়েছি, ডাক্তারকেও তো একটু সময় দিবি নাকি? আর তোকে বলেছি না অনেকবার, একদিন দুদিন এক সপ্তাহ, ব্যস। এর বেশী নয়, আবার ক’দিন পর। এই নিয়ে কোন কথা উঠুক আমি কখনও চাই না। তাই বারবার এই কথাটা বলে লাভ নেই।”

“কিন্তু কেন মা, আমি তোমার কাছে থাকলে কি প্রব্লেম?”

“কোন প্রব্লেম নেই, কিন্তু আমার যেমন ইচ্ছে করে, আমার মেয়ে আমার কাছে থাকুক, ঐ মানুষগুলোরও ইচ্ছে করে। তাই তোমার দু’পক্ষকেই দেখা উচিত। দাদু, ঠাম্মির কত বয়স হয়েছে বলতো? এই বয়সে এসে মানুষগুলোকে কষ্ট দেওয়া কি খুব দরকার?”

“তো তুমি কেন ঐ বাড়িতে গিয়ে থাকো না? আগে তাও যেতে, এখন তো একেবারেই যাও না। কেন? তুমি গেলেই তো… “

টিকলির কথাটা সযত্নে এড়িয়ে গেল অমৃতা, টিকলির কোঁকড়া চুলগুলো কপালের উপর থেকে সরাতে সরাতে বলল, “আচ্ছা সেদিনকার গল্প শুনি একটু। আজকেই তোর বাপির সাথে কথা হচ্ছিল, বলল সব। তুই বল এবার। কেমন ঘুরলি, কি খেলি, কথা হল কিছু?”

টিকলির মা অমৃতা বরাবরই এরকম। হাসি, ঠাট্টা, ইয়ার্কি, মজা, হৈহুল্লোড়ে মেতে থাকা একটা হাসিখুশি মানুষ। টিকলি ‘মঞ্জরী’তে যতটা সংযত, শান্ত, নম্র হয়ে থাকে, এখানে এলে যেন ততটাই বাঁধন ছাড়া, এই বাড়িতে এলেই যেন আসল ‘আমি’র খোঁজ পায় ও। ঐ বাড়িতে থাকা মানুষটা তো আসল টিকলি নয়, আসল তো এই মেয়েটা, যে অত ভেবে চিন্তে কথা বলে না, ভাললাগা খারাপ লাগাগুলো মন খুলে জানাতে ভয় পায় না। মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে গালটা টিপে ধপ করে শুয়ে পড়ল মায়ের কোলে, স্বর্গীয় সুখ!

“তোমায় তো বলাই হয়নি, আচ্ছা মা তুমি কখনও রোডসাইড ফাস্টফুডের দোকানগুলো থেকে ঝাল ঝাল লঙ্কা সস দেওয়া রোল খেতে খেতে ফুটপাথ ধরে হেঁটেছ?” মায়ের কোলে শুয়ে বেশ আহ্লাদিত হয়ে কথাগুলো বলল টিকলি।

মেয়ের চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে অমৃতা বলল, “বাব্বাহ, এ তো দেখছি ভূতের মুখে রাম নাম। কতবার তো বলেছি, নিজেই নাক কুঁচকেছিস। আমি তো দিব্যি খাই, যাক গে তাও ভালো… তারপর?”

“আমি তো খুব ঝাল খাই, আর রোলটা করেছিলও দারুণ, আর তার আগেই বৃষ্টিটা হয়ে গেছিল, একটা ঠান্ডা মিঠে হাওয়া, অন্ধকার নেমে তখন চত্বরটা আলোয় বেশ জমজমাট, সোঁদা গন্ধটা তখনও নাকে আসছিল, আর একটা লং ওয়াক, আমি কোনদিনও অত হাঁটিইনি, সবসময় তো গাড়িতেই যাতায়াত করি।”

“বহুবার বলেছি, ঐ এসি গাড়ির কাঁচ ঢাকা পৃথিবী থেকে বেরিয়ে একটু আসল দুনিয়াটা দ্যাখ, ডলপুতুলের মতো না বেঁচে একটু বাঁচার মত করে বাঁচ। যাই হোক, রাজদীপের সম্পর্কে আমার ধারণা কিন্তু অন্যরকম ছিল। তা আমার হবু জামাই বেশ রোম্যান্টিক বলতে হবে। আমি তো তোর বাবাকে আজ বলেছি, বিয়ের ডেট ফাইনালের আগে…”

“একমিনিট, একমিনিট। এখানে রাজদীপ কোথা থেকে এল?”

“তো কি বলছিস এতক্ষণ ধরে তুই?”

“ধ্যুর, তুমিও না। রাজদীপ কেন হতে যাবে? অভিমন্যুর কথা বলছিলাম, অভিমন্যু ব্যানার্জী, ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট, এম.এসসি ফাইনাল ইয়ার, বাড়ি উত্তর কলকাতা, শোভাবাজার। বুঝলে?”

ফোনটা বেজে উঠল অমৃতার। মেয়ের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করতে করতে  বললেন, “হুম, বুঝলাম।”

*****

“বলছি এবার একদিন প্রবীরকে আসতে বল, এবার দেখা সাক্ষাৎ করে কথাবার্তা শুরু হোক নাকি? যদি এই শীতেই…” জামাকাপড়গুলো আলমারিতে তুলতে তুলতে বললেন পরমাদেবী। আলোকনাথ প্রিয় আরামকেদারায় আধশোয়া হয়ে খবর কাগজটা পড়ছিলেন নিবিষ্ট মনে, পরমাদেবীর বার দুইতিন ডাকার পর নড়ে চড়ে উঠে বসলেন। চশমাটা চোখ থেকে নামিয়ে পাশের টেবিলটায় রেখে বললেন, হ্যাঁ, সবাই তো বলছে টিকলিরটা শীতেই হোক, অনি-র বেলায় তো গরমে…যাক গে, হ্যাঁ তাহলে তো ডাকলেই হয়। বেকার দেরী করে তো লাভ নেই। তার আগে বাড়ির সকলের সাথে কথাটা বলে নাও একবার, প্রবীরকে তো ফোন করাটা কোন ব্যাপার না। আজ রাত্রি বেলা খাবার পর তাহলে সকলকে একবার ঘরে ডাক। কথাবার্তা বলে নেওয়া যাক। আদিও তো এখন বাড়িতেই, আর টিকলি ফিরেছে?”

“না, ফোন করেছিল, বলল দু’দিন পর ফিরবে।”

“কেন? এক সপ্তাহ হতে চলল গেছে, দু’দিন পর আবার কেন? এসব বাড়াবাড়িগুলো যাতে না হয়, সেদিকে এবার একটু খেয়াল রাখো। তুমি তো জানো আমি কেন বলছি।”

“তুমি আবার একটু বেশীই চিন্তা কর বর্ধন মশাই। আসেনি ইয়ে… মানে মেজ বৌমার শরীরটা…

“অমৃতার? নামটা বললেই ভাল হতো। বাকী পরিচয়টুকুর অস্তিত্বটা আমার কাছে অন্তত আর নেই। যাক গে, আমার চা-টা দাও।”

ঘরে ঘরে সন্ধ্যে পড়ছে, শাঁখ বাজতে আরম্ভ করে দিয়েছে, পরমাদেবী বেরিয়ে গেলেন নিঃশব্দে।

*****

“উফফ, আর কতক্ষণ গো, সেই কখন থেকে জ্যামে আটকে। এটা কতদূর এলাম।”

“এখনও নর্থ ছেড়ে বেরোতে পারিনি গো টিকলি দিদি, আসলে এখানকার রাস্তাঘাট একটু সরু, আর এখন সব ওয়ান ওয়ে করে দিয়েছে, তাই আরো সমস্যা।”

“আমি যদি জানতাম এইরকম অবস্থা হবে, জীবনে আসতাম? মাও তেমনি, সাউথে এত ভাল ভাল দোকান, ম্যাডামের পছন্দ না, নর্থ থেকেই আনতে হবে, আর এমন দোকান সে অনলাইন ডেলিভারিটুকু অবধি দেয় না? সেই কোথা থেকে নর্থে এসেছি মিষ্টি কিনতে? মানে, সিরিয়াসলি,কাউকে বললে সেও হাসবে। এই প্রথম, এই শেষ, নেহাত ম্যাডামের জ্বর, মুখ ফুটে কিছু তো চায় না, তাই আর না বলতে পারলাম না।বকবক করতে করতেই গাড়ির কাঁচ পেরিয়ে টিকলির চোখ আটকাল সামনের ফুটপাথে। এই ওটা অভিমন্যু না? হ্যাঁ, তাই-ই তো, অভিমন্যুই। কিন্তু সেদিনকার আপাত শান্ত, হাসিমুখের ছেলেটা আজকে এরকম রুদ্রমূর্তি কেন? হতবাক হয়ে তাকিয়েছিল টিকলি অভিমন্যুর দিকে। জ্যামে আটকে ওর গাড়িটা, সামনে একটা বড়সড় জটলার জন্যই এই জ্যামটা। একটা বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে সম্ভবত ঝামেলাটা। টিকলির ইচ্ছে করছে এক্ষুণি গাড়ি থেকে নামতে, কিন্তু চারপাশের লোকগুলোর হাবভাব, আচরণে সত্যি বলতে সাহসে কুলোচ্ছে না। সাহসটা তো ওর বরাবরই কম। মায়ের মতন আর হতে পারল কই?

“টিকলি দিদি, এই ঝামেলার মধ্যে তুমি কিন্তু নেমো না, গাড়ির কাঁচ আমি সব তুলে দিয়েছি, পাবলিক ক্ষেপে আছে এখন খুব। রিস্ক নিয়ে লাভ নেই।”

টিকলি গাড়ির মধ্যেই বসেছিল, কিছুতেই মাথায় ঢুকছিল না কি হচ্ছে। কিন্তু ওর তো নেমে একবার সাহায্য টুকু… সেদিন অভিমন্যু তো ওকে সাহায্যই করেছিল। কিন্তু তার জন্য একবার ধন্যবাদটুকুও জানায়নি ও। রাজদীপের সাথে গাড়িতে উঠে চলে এসেছিল। মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিল এটা, কিন্তু আজ মনে পড়ছে, ওর গাড়িটা এগিয়ে বাঁক নেওয়া অবধি অভিমন্যু একজায়গাতেই দাঁড়িয়েছিল, গাড়িটার দিকে তাকিয়ে। আর ও কি করল? ছিঃ ছিঃ! খুব ভুল করেছে ও।

কিন্তু অভিমন্যুর সাথে ঐ বাচ্চা মেয়েটা, কে ও? অভিমন্যু তো মনে হচ্ছে এই বাচ্চা মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্যই এভাবে সবার সাথে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে, প্রাণপনে আগলাচ্ছে মেয়েটাকে। ওর গলার দুপাশের শিরা রীতিমত ফুলে উঠেছে চিৎকারে, মুখ চোখ লাল, পরনে একটা টিশার্ট, ধস্তা ধস্তিতে…আর… আর মেয়েটার চোখে মুখে একটা তীব্র ভয়, শুধু তাই নয়, মেয়েটার জামাকাপড়ে অত্যাচারের ছাপ স্পষ্ট, অন্যায় কিছু একটা ঘটেছে মেয়েটার সাথে তার মানে! মেয়েটাকে বুকে আঁকড়ে রেখেছে অভিমন্যু, কত বয়স হবে মেয়েটার, খুব বেশি হলে ১০ বোধ হয়। অভিমন্যুর চোখে মুখে তীব্র রাগ, চোখে চশমা থাকলেও সেই আগুনে দৃষ্টি টিকলির চোখ এড়াল না। অভিমন্যু একটু একটু করে পিছিয়ে যেতে লাগল, দূরত্ব বাড়তে বাড়তে এক সময় চোখের আড়াল হলো সে। টিকলির গাড়িটা জ্যাম কাটিয়ে এগিয়ে গেল অবশেষে, কিন্তু টিকলি? একটা ঘোরের মধ্যেই ছিল যেন ও, চুপচাপ বসে কিছুক্ষণ আগের ঘটা ঘটনাটার কথা ভাবতে লাগল চোখ বুজে, মেয়েটা কে ছিল? কি হয়েছে মেয়েটার? অভিমন্যু ঐরকম করছিল কেন? একদিনের, বলা ভাল কয়েকঘন্টার আলাপে যে মানুষ চেনা অসম্ভব সেটা ঠিক, কিন্তু ঐরকম শান্ত শিষ্ট একজন মানুষের ঐরকম রুদ্রমূর্তি, কিছুতেই চোখের সামনে থেকে সরাতে পারছিল না টিকলি। নিছকই উৎসাহ নাকি মেয়েটাকে ঐভাবে দেখে এরকম হচ্ছে? নাকি অভিমন্যুকে ঐভাবে ঐখানে এক্সপেক্ট করেনি, তাই। নাহ আর ভাবতে পারছে না, ও কবে থেকে এত এইসব নিয়ে ভাবতে শুরু করল কে জানে? এর থেকেও আরও অনেক বেশী কিছু ভাবার আছে ওর। চোখটা খুলল ও। এই তো, প্রায় এসেই গেছে।

*****

“বাবা আসব?”

নিজের ঘরে পায়চারি করছিলেন আলোকনাথ, বড় ছেলের গলা শুনে তাকালেন দরজার দিকে, ঘড়ির দিকে চাইলেন একবার।

“এসো,” লোকনাথ নিজের আরাম কেদারাটায় বসলেন সোজা হয়ে, বাকী সকলে এখনও কেন এসে পৌঁছায়নি এরকম একটা প্রশ্ন চোখে নিয়ে তাকালেন একবার ছেলের দিকে। পরমাদেবী ঘরে ঢুকলেন, সঙ্গে একে একে বাকি সবাই আসতে লাগলেন। রিমঝিম, আর বাড়ির বাকি ছেলেপুলেগুলো থাকলেই জায়গাটা জমিয়ে রাখে সবসময়। অনি-টা আগে কম কথা বলতো, এখন বেশ কথা বলে। টিকলিই নেই একমাত্র, আলোকনাথের চোখদুটো খুঁজছিল আদিত্যকে।

“তোমার মেজ ছেলে কোথায়? এখনও সময় হলো না তার আসার? নাকি নিজের মেয়ের বিয়েতেও কোন দায়িত্ব নেবে না সে?

“বাবা আসব?” আলোকনাথবাবুর কথা শেষ না হতেই ঘরে ঢুকল আদিত্যনাথ, টিকলির বাবা। ঘরে ঢুকতেই ওর মুখের অসন্তোষ চোখ এড়াল না পরমাদেবীর। বাবার দায়িত্ব নিয়ে বলা কথাটা যে ওর কানে পৌঁছেছে সেটা জানেন উনি। এই মানুষটা কখন কোথায় কাকে কি বলতে হয় এখনও শিখল না? আদিত্য যদি এত বড় ব্যবসাটার দায়িত্ব নিজের কাঁধে না নিত, আর শুধু দায়িত্বটুকু তো নেয়নি, সেটাকে মারাত্মক দক্ষতার সাথে সামলেছে, সামলাচ্ছেও, তারপরেও…

“হ্যাঁ, তো যেটা বলছিলাম, আমি স্থির করেছি, আগামী বুধবার প্রবীরদের একবার এই বাড়িতে আসতে বলব ডিনারে, রাজদীপ, কঙ্কনা সকলেই আসুক, কথাবার্তাটা হোক, যদি শীতেই দিন স্থির করতে হয়, তোমাদের কথা মত, তাহলে আর বেশী দেরী করে কোন লাভ নেই। হুট্ করে বললেই তো দিন ঠিকও হবে না। আমাদের গোবিন্দ ভট্টাচার্য্যকে একবার খবর দিতে হবে। তাই…”

“আচ্ছা, বাবা, একটা কথা আমি সেদিন থেকেই ভাবছি, কিন্তু আজ না বলে পারছি না, সেটা হচ্ছে টিকলির বিয়ের কথা হচ্ছে, আমাদের তো অমৃতার সাথেও একবার কথা বলে ওর মতটা জানা উচিত, আফটার অল মেয়ের বিয়ে তাতে মায়ের… মানে…” কথাটা আর শেষ করতে পারল না টিকলির বড়মা। কথা অসম্পূর্ণ রেখেই নামিয়ে নিল চোখদুটো। আলোকনাথের চোখে চোখ রেখে কথা বলে এমন মানুষ আছেই বা কজন? একজন ছিল, আর তার এই স্পর্ধার জন্যই আজ সে…

আলোকনাথবাবু একবার পুত্রবধূর দিকে, আর একবার পরমাদেবীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “কদিন ধরে এই ‘মঞ্জরী’তে অমৃতার কথা বড় বেশি হচ্ছে। তোমরা বোধহয় ভুলে গেছ সে স্বেচ্ছায় এই ‘মঞ্জরী’, এই রায়বর্ধন পরিবার ছেড়ে গেছে। আর যে নিজে সব ছেড়ে বেরিয়ে গেছে, তাকে ফিরিয়ে আনার দায় এই বাড়ির কারোরই নেই। সে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কি একবারও ভেবেছিল তাকে ছাড়া, টিকলি কিভাবে থাকবে? সুতরাং, যে গেছে তাকে নিয়ে আর বেশি বাড়াবাড়িটা দেখিয়ো না বড় বৌমা।” থামলেন আলোকনাথ। কারও মুখেই আর কোন কথা নেই, থাকার কথাও নয়। কিন্তু একজনের ভিতরটা বড্ড উসখুশ করছে যে। কিছুতেই যে পারছে না আর মুখ বন্ধ রাখতে, অথচ বেশী কিছু বলার সাহস বা মুখ কোনটাই যে নেই। পরমাদেবী ঠিক বুঝতে পেরেছিলেন ছেলের উসখুশানি। কোন কথাটা হৃদয়ের কোথায় গিয়ে ঠিক বেঁধে, মা বুঝবে না তো কে বুঝবে। হাতটা ছেলের হাতের উপর রেখে শান্ত হতে বললেন চোখের ইশারায়। কিন্তু ঘরের পরিবেশটা বড্ড দমবন্ধ লাগছিল যে আদিত্যর। কেমন যেন ভ্যাপসা, অস্বস্তিকর একটা আবহাওয়া।

“তাহলে তো আমার আরও আগে এই আলোচনা, বা এই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া উচিত বাবা। আমি আমার মেয়ের কোন দায়িত্বটা পালন করেছি?”

আলোকনাথের মুখের উপর এভাবে কথা বহু বছর পর আবার কেউ বলল। এক নিমেষে কথাগুলো বলে বেরিয়ে গেল আদিত্য।

।।২।।

টিকলির এই দুই বাড়িতে থাকলে মনে হয় যেন দুটো বাড়ি সম্পূর্ণ বিপরীত দুই মেরুতে অবস্থিত। ‘মঞ্জরী’ যতটা বনেদীয়ানা, গান বাজনা, আঁকা, লেখা, সিনেমা, কালচার, সৃজনশীলতায় মোড়া একটা স্তম্ভ, যেখানে কখনও একচুল এদিক ওদিক হওয়ার অনুমতি নেই, সেখানে নিজেদের কথার আগেও ভাবতে হয় লোকের কথা। যে বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এই কলকাতার প্রতিটা মানুষ একবার হলেও থমকে দাঁড়ায়, সেই ‘মঞ্জরী’র বিশাল দালান, ঘর, সিঁড়ি, ছাদ সব থাকা সত্ত্বেও নিজের জন্য বাঁচার জন্য, শ্বাস নেওয়ার জন্য ভাবতে হয় দুবার। আর একদিকে এই ছিমছাম ‘মুখার্জী ভিলা’। বাড়িটা টিকলির দাদুর তৈরী, দোতলা বাড়ি, চারপাশে ছোটখাটো একটা বাগান, নীচের তলায় মায়ের ক্লাস, রান্নাঘর, বসার ঘর, খাবার ঘর, আর উপরে ওদের শোবার ঘর, ঠাকুর ঘর, একটা সুন্দর ব্যালকনি, তাতে সাজানো নাম না জানা কত্ত গাছ। আর একটা ফাঁকা দাঁড়। দাদু নাকি শখ করে টিয়াপাখি কিনে এনেছিল হাট থেকে, কিন্তু মা-ই তাকে উড়িয়ে দেয়। টিকলি অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে, এটাকে এখানে কেন রেখেছ? মা কখনও উত্তর দেয়নি। কাল আবার ‘মঞ্জরী’তে ফেরা, আজ তাই মাকে ছাড়তেই ইচ্ছে করছে না টিকলির। মা আজ ওর পছন্দের রান্না করতেই রান্নাঘরে ঢুকেছিল এই শরীরে, জানে ও। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মা-এর যত্নে সাজানো গাছগুলো, বইয়ের আলমারিতে ঠাসা মায়ের পছন্দের বইগুলো বা ড্রেসিং টেবিলে সাজানো সুগন্ধী নীল সোনালী বোতলটা, খুব মিস করে এগুলোকে ও।

দরজায় আওয়াজ হতেই তাকাল ও। মা স্নান সেরে পুজো করে এই এল। একটু পর এবার লাঞ্চ। মা ড্রেসিং টেবিলের সামনেতে গিয়ে বসতেই পিছনে খাটের উপর গিয়ে বসল টিকলি। আয়নার মধ্যে দিয়েই মা-র চুল আঁচড়ানো, টিপ পরা, সাজতে দেখার এই অভ্যাসটা ওর ছোটবেলা থেকেই। মার দিকে দেখতে দেখতেই বলল ও, “মা জানো তো, কাল যখন ফিরছিলাম, অভিমন্যুকে দেখলাম।”

“তাই? তা ভালো তো, ওকেও একদিন ট্রিট দিয়ে দিস, ও তোকে খাইয়েছিল, তোরও তো খাওয়ানো উচিত।”

“না মা, ওসব বলছি না, একটা জটলা, ঝামেলা চলছিল রীতিমত, ওখানে দেখেছি। কিসের ঝামেলা বুঝতে পারিনি, কিন্তু প্রচুর লোকজন, মারপিট হতে বাকী ছিল মনে হয় শুধু।”

“সে কিরে, কি বলছিস? কিন্তু কেন?”

“কি জানি, তবে মন হয় একটা মেয়েকে নিয়ে?”

“মানে? তুই দেখলি ওকে একটা ঝামেলায়, তুই কিছু করলি না?” জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মুখ ঘুরিয়ে ফিরে তাকাল অমৃতা, মেয়ের দিকে।

টিকলি কি বলবে খুঁজে পাঁচিল না, শুধু মায়ের দৃষ্টিতে নিজেকে বড্ড নীচু লাগছিল ওর। কয়েকমুহূর্ত পর আবার বলল অমৃতা, “ওহ, সরি, তুই তো আবার অনন্যা রায়বর্ধন, ভুলেই গেছিলাম। তোদের থেকে আবার এসব সহমর্মিতা, মানবিকতা এক্সপেক্ট করাও… উফফ!”

উত্তেজনার বসে জোরে চুলে চিরুনি চালাতে গিয়ে চিরুনিটা সজোরে লাগল কপালের পুরোনো ক্ষতটায়, যেটা সবসময় চুলের আড়ালে লুকোনোই থাকে।

“মা ধীরে আঁচড়াও, এরকম করছ কেন?”

মেয়ের দিকে তাকালো একবার অমৃতা, আর একবার ক্ষতটার দিকে, “আজ অনেকগুলো পুরোনো কথা মনে করিয়ে দিলি তুই, আর দেরী করিস না, আজ সন্ধ্যেবেলাতেই যাবি তুই।”

কথাটা বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল অমৃতা। হতভম্বের মত বসে রইল টিকলি।

।।৩।।

“আরে এই টিকলি, আসবি তো তাড়াতাড়ি, প্রবীর আঙ্কলরা ঢুকে পড়েছেন,” বলেই দৌড় লাগল রিমঝিম, মানে টিকলির বৌদি।

টিকলির মনটা সকাল থেকেই অস্থির লাগছে বড্ড। মায়ের কাছে থেকে আসার পর থেকে মা একবারের জন্যও ফোন করেওনি, ফোনটা ধরেওনি। একেই মা-র শরীরটা খারাপ ছিল, বড্ড টেনশন হচ্ছে ওর। সেদিন থেকে মায়ের থেকে অদ্ভুত একটা ব্যবহার পাচ্ছে যেন ও। না, মা ওর উপর বকাবকি, রাগারাগি কিছুই করেনি। কিন্তু এই কিছু না বলাটাই যেন আরো বেশী করে বিঁধছে। মা জানে না ওর কত টেনশন হয়। এক তো একা থাকে, বিন্তি পিসি আছে তাও সে মানুষটারও বয়স হয়েছে। ধ্যুর, আবার বেজে গেল ফোনটা। ফোনটা ছুঁড়ে ঘর থেকে বেরনোর আগে আয়নাটার সামনে দাঁড়াল একবার ও। সাদা কেরালিয়ান কটনটা আগেরবার পুজোতে মা-ই দিয়েছিল ওকে। আর আজকের দিনটাতেও মা ছাড়া সবাই আছে। জোরে একটা শ্বাস ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নীচে গেল ও।

*****

‘মঞ্জরী’র বৈঠকখানাটা রীতিমত ঈর্ষণীয়। ঈর্ষণীয় বলার যে কোন একটা নির্দিষ্ট কারণ বলা যাবে না, মেহগনী কাঠের আসবাবই হোক, কিংবা বেলজিয়াম গ্লাসের আয়নায় তৈরী অন্দরের সাজ সজ্জা, হাতির দাঁতের তৈরী বাগানের টি-টেবিল কিংবা সুসজ্জিত ঝাড়লণ্ঠন, মানুষের মুগধ দৃষ্টিতে  না তাকিয়ে থেকে উপায় নেই। টিকলি যখন নীচে নামল তখন মোটামুটি বাড়ির সবাইই উপস্থিত।

প্রণাম সেরে ঠাকুমার কাছ ঘেঁষে সোফাটায় গিয়ে বসল ও। রাজদীপ, প্রবীর আঙ্কল, কঙ্কনা আন্টির সাথে সকলেই খোশ মেজাজে গল্পে মত্ত। কিন্তু টিকলির মনটা কিছুতেই শান্ত হচ্ছিল না। বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিল মায়ের কথা ভেবে। আবার মায়ের কিছু হলো না তো? আচ্ছা একবার বাবার ফোন থেকে ফোন করলে কেমন হয়? বাবার ফোন সচরাচর কাটে না মা, কারণ খুব প্রয়োজন ছাড়া বাবা ফোনই করে না। না, আর দেরী করা ঠিক হবে না। এবার ফোনটা করতেই হবে।

*****

“সেদিনকার জন্য কিন্তু আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি টিকলি, তুই প্লিজ প্লিজ রাগ করিস না। আমার নিজেরই এত খারাপ লাগছে।”

ব্যাকব্রাশ চুল, চোখে চশমা, ফুল স্লিভ শার্ট ফোল্ড করে পরা, হাতে দামী ঘড়ি, ডান হাতে চেন, রীতিমত টল, ডার্ক, হ্যান্ডসাম, ধোপ দুরস্ত ফিটফাট সুদর্শন রাজদীপ দাঁড়িয়ে টিকলির সামনে। দাদুর মতে বড়দের আলোচনায় ওদের থাকার কি প্রয়োজন, সুতরাং রাজীব আর টিকলির ঠিকানা আপাতত টিকলির ঘরের লাগোয়া বাইরের ব্যালকনিটা।

“আরে না, না, আর কতবার বলবি বলতো সরি?

“না রে, সেদিন ঐভাবে জ্যামে আটকে যাব সত্যিই ভাবিনি, বুঝলে আগেই বেরোতাম আরও। আর তারপর থেকে আর কোথাও তো সেভাবে বেরনোও তো হলো না। একদিন বেরোই চল। তোর পছন্দের জায়গাতেই যাব।”ছোটবেলায় এত কথা বলত না রাজদীপ, একটু চুপচাপ গোছেরই ছিল। এখন বেশ কথা বলে, আর সেই কথায় সবথেকে আকর্ষণীয় ওর কন্ঠ। প্রথমদিন টিকলি ফোনের ওপ্রান্তের এই কণ্ঠস্বরে ভিরমি যে খেয়েছিল, তা কি করে অস্বীকার করবে? রাজদীপ বলে যাচ্ছিল অনেক কিছু, টিকলি চুপচাপ তাকিয়েছিল, শুনছিল না তেমন কিছু। কিন্তু একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল ওর মধ্যে। ওর বিয়ের কথা চলছে নীচে, যার সাথে বিয়ে, সে ছোট্ট থেকেই অতি পরিচিত মানুষটা ওর কাছে, তাও কেমন যেন একটা অন্যরকম মন আনচান করা অনুভূতি, এই মুহূর্তগুলো ভাষায় বোঝানো সম্ভব না হয়তো। টিকলি না চেয়েও ওর নাকে কানে গালে লজ্জার লালচে আভাটা জাঁকিয়ে বসছিল তাই খুব সহজেই। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছিল বটে, কিন্তু রাজদীপের চোখে চোখ রাখলেই যেন বুক ধড়ফড়ানিটা দ্রুত হারে বেড়ে যাচ্ছে, পেটের মধ্যেও যেন উড়ছে অজস্র প্রজাপতি। গল্পের মধ্যে যে অনুভূতিগুলো পড়েছিল ও, সেগুলোই আজ বাস্তবে হচ্ছে ওর সাথে। মনে হচ্ছিল অনেক হল কথা, এবার পালাই। কোথা থেকে যে এত লজ্জা এল ওর মধ্যে কে জানে, রাজদীপের চোখে বেশিক্ষণ নিজের দৃষ্টি ধরে রাখতে পারছে না টিকলি। অবনত হচ্ছে ওর দৃষ্টি বারংবার। অবনত দৃষ্টিতে বাবার ফোনটা দ্রুত হাতে স্ক্রল করতে লাগল ও। মাকে ফোন করবে বলে নিয়ে এসেছিল। বাইরে হঠাৎই বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করেছে, বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল বটে। রাজদীপের কথাগুলো কানে একটু একটু করে ফিকে হচ্ছিল যখন স্ক্রল করতে করতে হাত থামল নাম্বারটায়। তারিখ আর সময় যা বলছে এটাই তো অভিমন্যুর নাম্বার তাই না? সেদিন তো বাবার ফোনেই ফোন করেছিল ও, আর কারও নাম্বার যে মনে থাকে না, বাবা আর মা ছাড়া, ডায়াল চিহ্ন টায় আঙ্গুল চলে যেতে চাইছে বারবার, একবার কি ফোন…তখনই কান ফাটিয়ে বাইরে বাজটা পড়ল।

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

সাঁঝের শিশির (অন্তিম পর্ব)

।। ১।।   ( বেশ কিছুদিন পর ) সারা বাড়িতে এই লাগোয়া বারান্দাটাই টিকলির সবথেকে প্রিয়। সামনে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে বাগান মতো, তারপর রাস্তা। আগে

Read More »

সাঁঝের শিশির (ষষ্ঠ পর্ব)

।।১।। (কিছুদিন পর) “আরে আমি নিজেই ফিরে যাব, রতনদা তো আছেই, আবার তুই আসবি কেন?” “তুই তো আচ্ছা হাঁদা, বলছি রতনদাকে ফেরত পাঠাতে, আর এবার

Read More »

সাঁঝের শিশির (পঞ্চম পর্ব)

।।১।। “এবার বিশ্বাস হল তো, মেয়েটা খামোখা কেন মিথ্যে বলবে বলো তো? আর আমি তো প্রথমেই দেখেছিলাম, তোমায় বলেওছিলাম, তুমিই আমার কথা বিশ্বাস করোনি, এখন

Read More »

সাঁঝের শিশির (তৃতীয় পর্ব)

“তুমি একবার আমার কথাটা শোনো, আচ্ছা আমার মিথ্যে বলে কি লাভ বলতো? আর তোমার মনে হয় আমি এই অবস্থাতেও মিথ্যে কথা বলব এখনও?” “সত্যি মিথ্যের

Read More »

সাঁঝের শিশির

প্রথম পর্ব ।।১।। “টিকলি তোর হলে চলে আয় এবার, খেতে দিয়ে দিয়েছি।” রেওয়াজ শেষে চোখ দুটো এতক্ষণে খুলল টিকলি, ঘড়ির দিকে তাকাল একবার। প্রণাম করে

Read More »

Share with