তারে আমি চোখে দেখিনি 

||১||

সময়টা ৮০ -র দশক | তখনও ঘরে ঘরে দূরভাষ মানে আমাদের টেলিফোনের আগমন হয়নি | প্রেম পত্রের চল তখন প্রবল | প্রেমপত্র পড়ার আমেজই আলাদা, এখনকার এস এম এস, হোয়াটস্যাপ-এ তার সিকিভাগ আমেজও নেই | কবে প্রেয়সীর চিঠি আসবে বা সপ্তাহ শেষে প্রিয় মানুষটার চিঠি পড়তে বসা আর সাথে হাজার কল্পনার বুনন, এসব নিয়েই তখনকার প্রেম | পুরোনো হয়েও যেন এখনকার থেকে আরও বেশি সজীব |

তো এরকমই এক দিনে এক ছেলে এক মেয়ের প্রেমে পড়ল, তাকে না দেখেই | অবাক হলেন তো? খুলেই বলি |

ভবানীপুরের বাড়িতে থাকে নিখিল দাশগুপ্ত, সাবেকী আমলের পুরোনো বাড়ি | তখনকার সময় একান্নবর্তী পরিবারের রমরমা, এখানেও গল্পটা তাই | মা, বাবা, দাদু, ঠাকুমা, কাকা, কাকী, জ্যাঠা, জেঠি, ভাই বোনদের নিয়ে জমজমাট বাড়ি যাকে বলে |

এই নিখিল হলো বইয়ের পোকা, বলা ভাল গল্পের বইয়ের পোকা | নিখিলের ঘরে একটা আস্ত আলমারি গল্পের বইয়ের দখলে | সেই ভাণ্ডারে পত্রিকা, রচনাবলী, ছোট গল্প, বড় গল্প সব রকম গল্পের স্বাদে ঠাঁসা, যা সত্যিই ঈর্ষণীয় | কলেজ স্ট্রিটের অলি-গলি নিখিলের মুখস্থ | নিখিল কলেজের সেকেন্ড ইয়ার, পড়াশোনা বাদে ওর শখ এই একটাই, গল্পের বই, আর হ্যাঁ নিখিল ভাল গিটারও বাজাতে পারে |

||২||

কলেজ স্ট্রিটে নিজের পছন্দের বইগুলো ঝটপট বাছতে ব্যস্ত ছিল নিখিল, হঠাৎ একটা বই-এর কভারে চোখ পড়ে | বইয়ের কভার পৃষ্ঠাটা এতটাই অন্যরকম, আকর্ষণীয় যে যেকোন মানুষই তাকাবে | বইটির কভারে ছবি দেওয়া – ‘একটা ছোট্ট মেয়ে, সামনে বিশাল দেওয়াল, ফুঁ দিয়ে নড়াচ্ছে দেওয়ালের ইটগুলো, আর ইটগুলো দেওয়াল থেকে খসে খসে পড়ছে, যেন হেলায় সামনের পাহাড় প্রতিম বাধাকে ভাঙছে |

বইটা তৎক্ষণাৎ হাতে তুলে নিল নিখিল | উল্টেপাল্টে বইটা দেখছে, এমন সময় অমরদা মানে দোকানে বসেন যিনি বললেন,” এটাই লাস্ট পিস্, নিয়ে যেতে পার, রেসপন্স ভাল |”

“কিন্তু লেখিকার নাম কখনো শুনিনি তো, ‘বিরাজ’ লেখা শুধু, পদবীও লেখা নেই |” নিখিল বইটা নাড়াচাড়া করতে করতে উত্তর দিল |

-“আরে ওসব ছদ্ম নাম লেখা, রেসপন্স বেশ ভাল, আর এটাই লাস্ট পড়ে আছে, তাই বললাম |

নিখিল নিয়েই নিল বইটা | বই-এর নাম -‘রূপকথা নয়’, খুব ইন্টারেষ্টিং লাগল নামটা | বাড়ি ফিরেই দেখতে বসল বইটা, ছোট গল্পের সংকলন | রুদ্ধস্বাসে দুটো গল্প পড়ে ফেলল নিখিল, যদি না মা ডাকত আরো পড়ত | তাড়াতাড়ি খেয়ে এসে আবার শুরু করল |

****************

ঢং ঢং ঢং, ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁল, এবার সবাই খাবার টেবিলে ডাকবে অগত্যা যেতেই হবে | বাপরে সন্ধ্যে থেকে শুরু করেছে, কখন এতটা সময় কেটে গেছে বুঝতেই পারেনি | তড়িঘড়ি নীচে নামল নিখিল, গোগ্রাসে খাচ্ছে রুটিগুলো |

মা আর না বলে পারল না,” কোন রাজকার্যটা আছে বলতো তোর?”

পাশ থেকে ছোট বোনটি ফুট কাটল,” কি আবার? নতুন বইয়ের আগমন ঘটেছে, ব্যস আর কোনো দিকে মন আছে নাকী?”

” এই তুই থাম তো, পাকা মেয়ে একটা “, বোনকে থামিয়ে দিয়ে খাওয়া শেষ করে উপরে নিজের ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে আবার সেই অনামী লেখিকার বই নিয়ে বসল | গল্পগুলো সবই প্রেমের, যেটা বইয়ের বিশেষত্ব নয়, সে তো প্রেমের গল্প অনেক পড়েছে | কিন্তু প্রতিটি গল্পে লেখিকা প্রেমের সংজ্ঞাকে উপস্থাপন করেছেন বিভিন্নভাবে | নিখিল কখনো ভেবেও দেখেনি যে এভাবেও ভালবাসা সম্ভব | সব মিলিয়ে অনবদ্য প্রতিটি গল্প, প্রেমের নানান রূপে সত্যি মন ভরিয়ে দেয় গল্পগুলো |

পড়তে পড়তেই কখন ঘুমিয়ে গেছে, বুঝতেই পারেনি | মাঝ রাতে একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায় নিখিলের | স্বপ্ন দেখেই কেমন মনটা ভাল হয়ে গেল | কী মিষ্টি প্রেমের ছিল স্বপ্নটা, স্বপ্নটা দেখেই নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি এল নিখিলের | মন ভাল করা অনুভূতি নিয়েই আবার ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে |

*****************

একঘুমে সকাল | ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরল নিখিল | বেরিয়ে পড়ল বটে, কিন্তু সঙ্গে নিয়ে চলল একরাশ ভাল লাগার অনুভূতি, যা ওর চিন্তাধারাকে একরাতে বদলে দিয়েছে, এতটা প্রভাবিত করেছে ওর মনকে |

||৩||

( বেশ কিছুদিন পর )

আজ আবার কলেজ স্ট্রিটে নিখিল, নিজের পছন্দের জায়গা, বইয়ের ভিড়ে | বইয়ের মধ্যে থেকে আবারও তাড়াতাড়ি নিজের পছন্দটাকে খুঁজে নিতে ব্যস্ত নিখিল, পছন্দের মাসিক পত্রিকা | পাতা উলটিয়ে দেখল, সেখানে ‘বিরাজ’ বিরাজমান | বাবা ! খব অল্প সময়ের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি মানুষের মনে বিরাজ করছেন তিনি, কিন্তু কে এই বিরাজ? বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে আজ নিখিলের | যার লেখনী এতটা প্রভাবিত করতে পারে নিখিলকে, সে মানুষটা তাহলে কতটা সুন্দর ? নিজেকে আর আটকাতে না পেরে জিজ্ঞেস করল সমরদাকে, ” আচ্ছা, সমরদা, এই ‘বিরাজ’, ইনি কে বলতো | কিছু জানো?”

সমরদা হাতের কাজ সামলাতে সামলাতে না তাকিয়েই উত্তর দিল,”না ভাই, বলতে পারব না | তবে যে পাবলিকেশনস থেকে বেরোয় তাদেরকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখতে পার |”

নিখিল বইগুলো কিনে বিল মিটিয়ে বেরিয়ে পড়ল দোকান থেকে | ‘মরুতীর্থ পাবলিকেশন’ থেকে বেরোচ্ছে এই ‘বিরাজ’-এর গল্প, ওরা নিশ্চই জানবে, কলেজ স্ট্রীট-এই ওদের অফিস | তাড়াতাড়ি পা চালাল নিখিল |

*****************

“দেখুন, আমাদের তো কিছু রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন্স থাকে, আমরা এভাবে কোন লেখক লেখিকার পার্সোনাল ডিটেলস শেয়ার করতে পারি না তার অনুমতি ছাড়া | আপনি বরং এককাজ করুন, কদিন বাদে আসুন, দেখছি কিছু করা যায় কিনা | এনাকে নিয়ে মার্কেটে বেশ চর্চাও চলছে মশাই | আপনিই এক নন, আপনার মত আর কয়েকজন খোঁজ করছিলেন |”

*****************

ভগ্ন হৃদয় নিয়ে আপাতত বাড়ি ফিরলো নিখিল | আছে, তার মানে নিখিল এক নয়, আরও অনেক মানুষের মনেই হেলায় প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছেন এই ‘বিরাজ’ | কিন্তু অন্যলোকের মনের খবর রেখে তার কি লাভ? নিখিলকেই এখন কে সামলায় তার নেই ঠিক |

পত্রিকাতে বিরাজের তিনটি গল্পই আপাতত শেষ | কিন্তু প্রভাব যেন বেড়েই চলেছে, একলহমায় যেন নিজের লেখনীতে সবকিছু ওলট-পালট করার ক্ষমতা রাখেন এই লেখিকা | নাহ নিখিল কি একটু বেশিই ভাবছে? কিন্তু না ভেবেও তো থাকতে পারছে না |

****************

বেশ কিছুদিন পর নিখিল আজ আবার কলেজ স্ট্রীটে | একই রকম রুটিন মাফিক বই কিনে, ‘বিরাজ’-এর গল্প কিছু কিনে, পাবলিকেশনস | এই নিয়ে বিরাজ-এর মোট ১৮টি গল্প মনে হয় কম করে ১০০বার পরে ফেলেছে সে, তবু যেন কোনো বিরক্তি নেই |

নাহ ‘বিরাজ’-এর কোনো হদিস, পরিচয়, প্রকাশনীর পক্ষ থেকে এখনও দেয়নি | এই নিয়ে নিখিল এই মাসে তিন বার গেল ওদের অফিস | রোজই বলে, “কাল আসুন, পরশু আসুন |”

নিখিলও তেমন, ও-ও হাল ছাড়বার পাত্র নয় |

****************

এই বেশ কিছুদিনে, তা প্রায় কয়েক মাস হলো, ‘বিরাজ’কে অনেকেই চিনে ফেলেছেন | চিনে ফেলা কথাটা ভুল, বলা উচিত বিরাজের গল্পের সাথে পরিচিত হয়েছেন | দোকানে কাস্টমারদের ডিমান্ড দেখলেই সেটা বোঝা যায় | আর হবে নাই বা কেন, ‘বিরাজ’ এরকম একজন মানু যে বিখ্যাত হবেনই, তা শুধু সময়ের অপেক্ষা |

||৪||

নিখিল মানুষটাই যেন এখন বেশ খানিকটা বদলেছে, তার চিন্তা ভাবনা ধ্যান ধারণাও অনেক বদলেছে | শুধু নিখিল না, এখন বাড়ির আরও কিছু সদস্যও ‘বিরাজ’-এর ফ্যান-এর লিস্টে |

অনেক কষ্টে একটা ব্যবস্থা হয়েছে ওনার মানে ‘বিরাজ’-এর সাথে কথা বলার | ওনার একটা পোস্টাল অ্যাড্রেস দিয়ে, “ওখানে চিঠি লিখতে পারেন “- এই বলে নিখিলের হাতে ধরাল কাগজটা অফিসের লোকটি |

****************

আজ নিখিল খুব খুশি, ‘চিঠি তো পাঠাবোই কিন্তু ঠিকানা যখন পেয়েছি একবার ঘুরে দেখে এলে তো মন্দ হয় না’, দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল মাথায় | পরিকল্পনা মত, লিখিত ঠিকানা খুঁজে পৌঁছে গেল নিখিল | ‘এই সেই বাড়ি , এই বাড়ির উপর নজর রাখলেই তার মানে ‘বিরাজ’কে দেখতে পাওয়া যাবে |

****************

নাহ, কয়েকদিন ধরে নজর রেখেও কোনো লাভ হলো না, কোনো মহিলাকেই দেখা গেল না | আচ্ছা, তাহলে কি ছদ্ম নামের আড়ালে উনি একজন পুরুষ মানুষ? মানে লেখক? কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না নিখিল | নিজের ঘরে বসে নিখিল গান শুনছিল আর নিজের পড়ার বইগুলো ওল্টাচ্ছিল |

‘তারে আমি চোখে দেখিনি, তার অনেক গল্প শুনেছি, গল্প শুনে তারে আমি অল্প অল্প ভালবেসেছি..|’ গানটার লাইনটা কানে আসতেই কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেল নিখিল | আচ্ছা সে এরকম পাগলামো করছে কেন? বিরাজ যেই হন না কেন, তাকে দেখে লাভটা কি ওর ? ও একজন পাঠক আর উনি লেখেন, ব্যস, এর বেশি আর কী হতে পারে সম্পর্ক? কিন্তু চিন্তা থেকে নিজেকে বিরত করতে পারছে না , তাকে না চিনে, না দেখেই, শুধু লেখার সাথে পরিচিত হয়েই |

নিখিল নির্দিষ্ট ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েও দিল, আর কী আশ্চর্য, সেই চিঠির উত্তরও এল | সারা চিঠি জুড়ে নিখিল বিরাজ-এর লেখনীর ভূয়সী প্রশংসা করে ছিল, সাথে বিরাজ-এর সঙ্গে একবার দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশও করেছিল |

বিরাজ-এর দেওয়া চিঠিতে মাত্র কটি লাইন, ধন্যবাদ জ্ঞাপক কিছু কথা ব্যস, দেখা করার কোন উল্লেখই নেই |

নিখিলও ছাড়বার পাত্র নয়, ও-ও এর শেষ দেখে ছাড়বে |

||৫||

চিঠির আদান প্রদান এখন প্রায়শই হয়, ওই তরফ থেকে লেখক পাঠক সম্পর্কিত লেখা ছাড়া আর কিছু থাকে না, কিন্তু নিখিলের কাছে এখন সম্পর্কটা এর থেকে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে | বিরাজ যেই হোক না কেন, তার জন্য নিখিলের মনে একটা বিশেষ, অন্যরকম জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছে যেটা ও নিজেও বোঝে | হাতের লেখা দেখে সে এটুকু বুঝে গেছে যে যিনি একজন নারী, আর এই নারী নিজের লেখার শক্তি দিয়ে অনেক পাথর হেলাতে যে সক্ষম এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই |

নিখিল একনিষ্ঠ ভাবে নিজের প্রতিটি চিঠিতে দেখা করার কথা বলে যায় | এই ক’মাসে বিরাজ যথেষ্ট পরিচিত নাম বইপ্রেমীদের কাছে |

****************

অবশেষে বোধ হয় চিঁড়ে ভিজল, লেখিকা দেখা করতে অবশেষে রাজি হলেন | সেই দিনটার আনন্দের কথা বলে বোঝানো সম্ভব না নিখিলের পক্ষে | এতগুলো মাস ধরে ও যাকে একবার দেখবার জন্য চেয়ে এসেছে মনে প্রাণে, অবশেষে তাকে দেখবে | সে যেমনই হোক, যাই হোক, তার জন্য নিখিলের মনে সবদিন জায়গা থাকবে |

****************

বিকেল পাঁচটা, কফি হাউস, নিখিল যেন আজ একটু বেশিই নার্ভাস | অবশেষে বিরাজ এলেন | নাহ, সুন্দরী কোন অংশেই বলা যায় না যদি মুখ দেখে বিচার করা হয়, কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দেখে যে কেউ এই চোখের প্রেমে পড়বে | মার্জিত রুচি, কথাবার্তা, নিখিল হাঁ করে বিরাজকে দেখছে তো দেখছেই |

আরে এ তো আমাদের কলেজের সোমলতা বলে মেয়েটা, খেয়ালই করেনি নিখিল এতক্ষন, এখন ভাল করে দেখল | গায়ের রং নিয়ে রীতিমতো ঠাট্টা ইয়ার্কি করে নিখিলরা ,অনেক টিটকিরিও মেরেছে…অসম্মানজনক মন্তব্যও করতে ছাড়েনি,যার দিকে ভালভাবে দুপলক তাকানোর প্রয়োজন বোধ করেনি কোনদিন, সেই মেয়েটাই আজ নিজের ক্ষমতায় এরকম বহু নীচ মানসিকতার মানুষের মনকে প্রভাবিত করে ফেলেছে | বলা ভাল আজ সোমলতার জন্যই নিখিলও নিজের চিন্তা ভাবনা কে বদলাতে পেরেছে | ভালবাসা রূপের মুগ্ধতায় নয়, মনের স্বচ্ছতায় বাঁধা পড়া উচিত | সোমলতা নিখিলের কলেজেই ফার্স্ট ইয়ার আর্টস |

নমস্কার জানিয়ে দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী পদক্ষেপে সামনের সিট্-এ বসল সোমলতা |

“তুমি, আপনি, ..মানে…” – নিখিল এতটাই লজ্জিত যে চোখ তুলে তাকাতেও দ্বিধা বোধ করছিলো |

“আমায় তুমিই বলতে পারেন, আমি আপনার থেকে জুনিয়র |” – সোমলতা |

“তোমার এত গুণ জানতাম না সত্যিই, আমি তোমার লেখার বড় ভক্ত এখন একজন |” -নিখিল |

চিঠিতে আপনার লেখায় সত্যি একটা আন্তরিকতা খুঁজে পেয়েছিলাম, তাই দেখা করতেই হলো | এরকম অনেক আবদারই পাই, কিন্তু আপনাকে ভিড়ের থেকে আলাদা পাঠক মনে হলো | আর আমার লেখা পড়ার পিছনে এত সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ | আসলে বাড়িতে এসব নিয়ে একটু অসুবিধা আছে, তাই ছদ্ম নাম আরকী | আপনার চিঠিগুলো এই জন্য কাকার বাড়ির ঠিকানায় পৌঁছাত, যাতে বাড়িতে বাবা না জানতে পারেন | কাকা খুব সাপোর্টিভ কিন্তু বাবা এসব পছন্দ করেন না |”, কথা শেষে করে হাসলেন বিরাজ ওরফে সোমলতা, যে হাসিতে কী ছিল নিখিল জানে না, কিন্তু, এই হাসি দেখবার জন্য ও সব কিছু করতে পারে এখন, সেটা ও নিজেও বুঝে গেছিল | যদিও চাওয়াটা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল |

 *****************

 বিরাজকে কে না চেনে এখন, তবে ওনার একনিষ্ঠ ভক্ত, প্রেমিক, নিখিল-ই একমাত্র চেনে তার সোমলতাকে | নিজের মনের কথা বিরাজকে জানাতে খুব বেশি দেরি করেনি নিখিল ,কিন্তু প্রখর আত্মসম্মানের কাছে নত হয়ে গেছিল সব কিছু | বিরাজ একটা কথাই বলেছিল “কৈ কলেজে চেনা কালীন তো এতটুকু সম্মানজনক কথা শুনিনি, সব টুকুই কানে আসতো, আমাদের পরিচয়টা শুধুমাত্র লেখিকা পাঠক দিয়েই শুরু হয়েছিল, সেটুকুর জন্যই আমি দেখা করতে রাজি হয়েছিলাম…কিন্তু তার বাইরে আমার সিনিয়র নিখিলের জন্য কোনো জায়গা বা সম্মান আমার মনে নেই | কেন সেটা নিশ্চই আর বলে দিতে হবে না |”

নাহ গলাতে পারেনি নিখিল সোমলতাকে, অপেক্ষাই একমাত্র সঙ্গী নিখিলের আর একটাই ক্ষীণ আশা, হয়তো নিখিলকে ক্ষমা করবে সোমলতা, হয়তো বিরাজ বুঝবে নিখিলকে কোনোদিন….হয়তো….

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

মুক্তি

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল, আকাশ তখন থেকে ঠায় বসেই রয়েছে ঘাটে। এখন বাঁধানো ঘাট থেকে করিডোর হয়ে বাবা বিশ্বনাথের মন্দিরে পুজো দেওয়া অনেকটা সহজ

Read More »

বন্ধু হবি চল

বাক্সপেটরা নিয়ে স্টেশনেই বসে ছিল নয়না, বৃষ্টি পড়েই চলেছে, মুষলধারায়। বাবা বলল আরেকটু অপেক্ষা করতে, এত বৃষ্টিতে তো ছাতাও হার মানবে, আর বেরিয়ে রাস্তাও অজানা

Read More »

টিফিনবাক্স

প্রতিবারের মতন এই বছর ও সমস্ত সরঞ্জাম গুছিয়ে বেরোনোর জন্য ব্যস্ত অমিত, অন্তত সন্ধ্যার মধ্যে বেরোতে না পারলে খুব মুশকিল। পুজোর দিকটা কতদূর কি হলো

Read More »

ক্লিক

।।১।। -“মালিনী, কালকের মিটিংটা কখন ফিক্স করেছ? -“ম্যাম, সকাল ১১টা।” -“ওকে, কনফার্মেশন পেয়ে গেছ?” -“ইয়েস ম্যাম।” -“ওকে গুড। আর।।। এক মিনিট।।।” টেবিল থেকে ফোনটা তুলে

Read More »

শিক্ষা

।।১।। দাপুটে, বদরাগী, মেজাজি এই সব কটা বিশেষণই বেশ ভালো যায় মিসেস বোসের সাথে। রেণুকা বোস আর অমরনাথ বোস সানফ্লাওয়ার এপার্টমেন্টে ১২০০ স্কোয়ারফিটের ফ্ল্যাট 2c

Read More »

বিদায়

।। ১।। রীতিমত জোর করেই নন্দিনীকে পাহাড়ে নিয়ে এলো সঙ্গীতারা। আসার ইচ্ছে তো ছিল না ওর একদমই, শরীর সাথ দিলেও মনটা কোনোভাবেই সাথ দিচ্ছে না।

Read More »

Share with