||১||
” মা আমি বেরোচ্ছি, দরজাটা লাগিয়ে দিও”, বলেই তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিজের বাইকে স্টার্ট দেয় আদিত্য | আদিত্য চৌধুরী, মনতোষ চৌধুরী ও গিরিজা দেবীর একমাত্র পুত্রসন্তান , বয়স ২১, কলেজে ফাইনাল ইয়ার | আদিত্যর দিদি আয়েশা ওর থেকে বছর চারেক বড়, বিয়ের কথাবার্তা চলছে |
মা, বাবা, দিদি নিয়ে আদিত্য কলকাতায় থাকে নিজেদের ছোট্ট দুকামরার বাসায় | বাবা এই বছরই রিটায়ার করবেন, দিদির বিয়ে ও আছে | এই সময়ে একটা চাকরি পেয়ে গেলে খুব ভালো, হয় | আদিত্যর ছোট্ট থেকেই ইচ্ছে আর্মিতে জয়েন করবে, দেশের জন্য কিছু করে যাবে, চেষ্টাও করছে | মাকে ক্লাস আছে বলে আদিত্য বেরোলো বটে কিন্তু ক্লাস আসলে এগারোটা থেকে | এখন বেরোনোর কারনটা অন্য | এই সময়ই মেয়েটা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে ওঠে | ওকে এক ঝলক না দেখলে আদিত্যর দিনই শুরু হয় না, কি মিষ্টি হাসি টা ! ওই হাসিটার কাছে যেন হাজার মুক্তোর আভাও ফিকে হয়ে যায়, কপালে ছোট্ট টিপ্, কানে হালকা ঝুমকো, খোলা রেশমের মতো চুল সামলে ওড়না সামলানোর কায়দা, এসব দেখে দেখে বিগত এক বছর ধরে আদিত্যর শয়নে স্বপনে শুধু এই সুন্দরী |
সুন্দরীর আসল নাম বিন্দু, বিন্দু মিত্র ,পাশের পাড়াতেই থাকে , এবছর H.S দেবে |
সব খবর আদিত্য জোগাড় করে ফেললেও, বিন্দুকে এখনো মনের কথা বলে উঠতে পারেনি আদিত্য | রোজই ভাবে আজ নয় কাল , বলে আর উঠতে পারছে না | ওদিকে বন্ধুরাও এবার পিছনে লাগা শুরু করেছে -” তোর দ্বারা আর হলো না ভাই ছেড়ে দে ” বা ” এক কাজ কর ওর বিয়েতে গিয়ে লুচি দিস ” ইত্যাদি ইত্যাদি |
*****************
আজ যা খুশি হয়ে যাক , বলেই দেব দ্যাখ, এই বলে বাইক ছোটালো আদিত্য, সময়ের খানিকটা আগে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছে গেছে আদিত্য, সঙ্গে দুই সাগরেদ ছোটবেলার বন্ধু বিট্টু আর রাজা |
আদিত্যকে দেখেই রাজা বললো, “অরে গুরু এস এস, দ্যাখো তুমি এতোদিনেও যা করতে পারলে না | আমাদের বিট্টু সেটা করে ফেলেছে |”
আদিত্য একটু অবাক হয়েই বললো ,”মানে? বিট্টু আবার কি করলো ভাই?”
“আরে মালটা ছুপা রুস্তম, এখন ফোনটা কেড়ে নিলাম তাই জানলাম, শালাটা প্রেম করছে, ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে | বুঝলি কিছু?”, রাজা |
আদিত্য হতভম্ব হয়ে বিট্টুর পিঠ চাপড়ে বললো,” কি ভাই ? কি চলছে? তা মামনিটি কে? আমাদের বলিসনি , এতো সাহস তোর, হ্যাঁ?
রাজা- ,” এইটা হচ্ছে লাখ টাকার প্রশ্ন, মামনিটির নাম রিয়া, আর সে আর কেউ নয়, আমাদের বিন্দু বৌদির প্রিয় বান্ধবী যার সাথে বৌদি রোজ বাসে ওঠে |”
“আরে গুরু, আমি আমারটা সেট করতে পারলাম না | আর তুই মাঝখান থেকে সেট করে ফেললি রে? আজ তো খাওয়াতেই হবে”- এই বলে আদি বিট্টুকে আনন্দে জড়িয়ে ধরলো , রাজাও যোগ দিলো |
ওদের খোশ গল্পের মাঝেই রাজা বললো,” এই দ্যাখ দ্যাখ দুই বৌদিই আসছে, চুপ চুপ |”
আদিত্য পিছন ঘুরে তাকাতেই দ্যাখে,সাদা সালোয়ার, খোলা চুল, লাল ওড়না, ঝুমকো, টিপ্ এ’সব কিছু মিলিয়ে যেন মোহময়ী লাগছে বিন্দুকে, আদিত্যর বুকের ভেতরটা ধুকপুক করতে লাগলো প্রতিবারের মতো, বিট্টু এগিয়ে গিয়ে ওর বান্ধবী রিয়ার সাথে একটু কথা বলছে , সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে আদিত্য ; আরেকটু দীর্ঘতর হোক বিন্দু কে প্রাণ ভরে দেখার সময়টা, আজ বিন্দুও যেন একটু বেশীই ওকে দেখছে | ধুস কথা বলা হয়ে গেলো | ‘ভাই আরেকটু কথা বলতে পারলি না ? আমি ওকে দুচোখ ভোরে দেখতে পেতাম’, মনে মনে ভাবলো আদিত্য |
বাসে উঠে চলে গেলো আদিত্যর স্বপ্নপরী | হঠাৎই আদিত্যর চোখ আটকালো, ‘এই দ্যাখ দ্যাখ, বিন্দু আজ জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে পিছন ঘুরে দেখলো আদিত্যকে |’
ওহ! দিনটা আজ দারুন যাবে |
রাজা পিঠ চাপড়ে বললো ,” জিও কাকা ! তোমার উন্নতি ঠেকায় কে ? এবার অন্তত বলে দে | বৌদি তো বুঝিয়েই দিলো , বৌদিরও তোকে পছন্দ, আর কতদিন ধরে এভাবে দেখবি বলতো ? এবার বল | বিট্টুও বলে দিলো দ্যাখ |”
এই বলে তিন বন্ধু বাইকে স্টার্ট দিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হলো |
||২||
দিন এগোতে লাগলো | কিছুদিন ধরেই বিন্দুর তাকানো , হাব ভাব দেখে আদিত্য বুঝতে পারছে, বিন্দুও চায় আদিত্যকে, আদিত্যর এবার বলে দেওয়া উচিত , কিন্তু সামনে গিয়ে বলতে পারছে কই? যদি বাইচান্স না বলে দেয়? তখন আদিত্যর কি হবে? এটা ভাবেই আদিত্য খালি ভয় পাচ্ছে এতদিন ধরে |
পরদিন আবার একই সময়, একই জায়গা, সেই বাসস্ট্যান্ড, সেই আদিত্য আর ওর দুই সাগরেদ, সেই বিন্দুর বাস ধরতে আসা, তবে আজ একটু অন্যরকম | আজ টেডি ডে বলে বিট্টু রিয়ার জন্য একটা বড়সড় ভালুক কিনে এনেছে | কিন্তু, রিয়া এতো বড় টেডি নিয়ে পড়তেই বা যাবে কি করে, আর সবথেকে বড় কথা বাড়িতে কি বলবে?
আদিত্য পাশ থেকে হঠাৎ বললো ,” আপনি কিনেছেন বলে দেবেন |”
বিন্দু চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললো, ” আপনি তাহলে মিথ্যা বলতে বলছেন একটা টেডির জন্য, আর আমি ওকে টেডি দিয়েছি বিশ্বাসযোগ্য বুঝি?”
আদিত্য একটু লজ্জা পেয়ে বললো,” একটু ম্যানেজ করে দিন না |”
বিন্দু আদিত্যর চোখে চোখ রেখে বললো একটু আস্তে আস্তে,” এতদিন তো মুখে কোনো কথা ফোটেনি, আজ হঠাৎ বন্ধুর জন্য খুব মুখে বুলি ফুটেছে দেখছি |”
আদিত্য মুখে হাসি নিয়ে বললো, ” অভয় দিলে নিজের জন্যও কিছু বলতে পারি?”
বিন্দু হেসে ,” আমি ডাকিনি যোগিনী না, তাতেও কেউ ভয় পেলে সেটা তার প্রবলেম |” বলে মুখের হাসি আলতো করে ছড়িয়ে দিয়ে বাসে উঠে গেলো | বাস চলে গেলো একরাশ ধোঁয়া উড়িয়ে , সেই ধোঁয়াতেই স্বপ্ন বুনতে শুরু করলো আদিত্যর দুটো চোখ | নাহ, আর কোনো ভয় নেই , বিন্দুও তার মানে আদিত্যকে ভালোবাসে |
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট থেকে শত হস্ত দূরে থাকে আদিত্য, এসব একদম ভালো লাগে না ওর | কিন্তু রাজা আর বিট্টুর জন্য আজ একটা একাউন্ট খুলতে বাধ্য হলো ফেসবুকে | রাজাই খুলে দিলো একাউন্টটা কলেজের কম্পিউটার থেকে | বিন্দুও নাকি আছে এখানে, ওই জন্যই আদিত্য রাজী হলো |
বিন্দু মিত্র টাইপ করে বিন্দুর একাউন্ট খুঁজে পেতেও টাইম লাগলো না | রাজা বললো,” কিরে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টটা পাঠাই?” আদিত্য মাথা নেড়ে লজ্জা লজ্জা মুখে সম্মতি জানালো |
রাজা বললো, ” ওহ ! গুরু লজ্জা পাচ্ছে দ্যাখ | নাও পাঠিয়ে দিলাম, এবার শুরু হয়ে যাও |”
||৩||
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট হতেও বেশি সময় লাগলো না | প্রেম অবশেষে শুরু হলো , তরতর করে এগোতে লাগলো আদি আর বিন্দুর প্রেম | পাড়ার মোড়ের ফুচকাওয়ালা, পার্ক, সিনেমা হল সব সাক্ষী রইলো ওদের প্রেমের |
একটা স্বপ্ন পূরণ হতে না হতেই আরেক স্বপ্ন হাতছানি দিয়ে ডাকলো আদিত্যকে | ওর এতদিনের স্বপ্ন আর্মিতে জয়েন করার সেটাও পূরণ হলো | সিলেক্টেড হলো আর্মিতে |
*****************
জয়েনিং লেটারটা দেখেই বিন্দুর মুক্তোর হাসির সাথে চোখটাও ছলছল করে উঠলো -” তুমি তাহলে চলে যাবে?”
“যেতে তো হবেই বিন্দু , আমার কত দিনের স্বপ্ন সত্যি হলো আর বাবারও বয়স হচ্ছে | আমায় তো এবার হালটা ধরতেই হতো |”- আদি |
বিন্দু জড়িয়ে ধরলো আদিত্যকে, ” আমার যে খুব ভয় করছে, তোমার যদি কিছু হয়ে যায় ? আমি যে তোমায় ছাড়া বাঁচবো না আদিত্য |”
” ধুর পাগলী ” , বিন্দুর কপালে একটা চুমু খেয়ে বিন্দুকে জড়িয়ে ধরে আদিত্য বললো, ” কিছু হবে না আমার তুমি আছো তো | তোমায় ছাড়া আমি মরেও শান্তি পাবো না |”
“আবার বাজে কথা , এরকম বলবে না তুমি “-বিন্দু |
দুটো প্রাণ একে অপরকে ভালোবাসায় আঁকড়ে বাঁচতে শুরু করেছিল |
*****************
দিন যেতে লাগলো , আদিত্য জয়েনিং নিয়ে এখান থেকে চলে গেছে, বাসস্ট্যান্ডটা মিস করে পুরানো দিন গুলো | রাজা বিট্টু এখন নিজের ভবিষৎ গড়তে ব্যস্ত আর বিন্দুর চোখে একরাশ প্রতীক্ষা | ঠিক মতো ফোনে কথা বলাও সম্ভব হয় না | সবসময়ই একটা চাপা টেনশন, কিছু হলো না তো , ও ঠিক আছে তো ? এভাবেই দুশ্চিন্তায় – প্রতীক্ষায় দিন কাটতে থাকে বিন্দুর |
||৪||
বেশ কিছুদিন পর কিছুদিনের ছুটিতে বাড়ি ফিরলো আদিত্য , ওদের পুরানো দেখা করার জায়গাটা, যেটা ওদের এতোদিন মিস করেছে, সেখানেই আবার দেখা করলো বিন্দু আর আদি |
“খুব রোগা লাগছে তোমায় ” বিন্দুর চোখের দিকে তাকিয়ে বিন্দুর থুতনি ধরে বললো আদিত্য |
“টেনশন, চিন্তায় অর্ধেক সময় তো মরেই থাকি, তুমি আর কি বুঝবে?” অভিমান দেখিয়ে বললো বিন্দু |
” আচ্ছা কিসের এতো টেনশন ? আমি যদি মরে যাই তাই তো? একটা কথা সবসময় মনে রাখবে বিন্দু , তুমি একজন যোদ্ধার স্ত্রী হতে চলেছো, যে দেশের জন্য লড়াই করে, তার স্ত্রীকেও ততোটাই শক্ত হতে হবে | দেশের জন্য কাজ এতো সহজ নয় বিন্দু, আর যদি দেশের জন্য মরেও যাই , তাও তুমি কাঁদবে না বরং গর্ব করবে , বুঝেছো?”
“বিন্দু বললো,” ওসব কথা থাকে না | কতদিন তোমায় মন ভোরে দেখিনি, দেখি একটু | দুজন দুজনের চোখে হারিয়ে গেলো , আবেশে নিমগ্ন হলো দুটি ওষ্ঠ |
****************
পার্কের ঘাস ছিড়তে ছিড়তে বিন্দু আদিত্যর কাঁধে মাথা রেখে বললো ,” আবার কবে যাওয়া ?”
“এই তো এই শনিবারই বেরিয়ে যাবো “- আদিত্য বিন্দুর খোলা চুলের সাথে খেলতে খেলতে উত্তর দিলো | “মন দিয়ে পড়াশোনা করবে আর ভালো থাকবে আর হাসি খুশি থাকবে, তুমি কাঁদলে কি আমি ভালো থাকতে পারি? বলে বিন্দুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আদি |
||৫||
সময় নিজের নিয়মে এগোতে লাগলো, বিন্দুর কলেজ শেষ হলো | আদিত্যর জন্য প্রতীক্ষাই এখন ওর বেশির ভাগ সময়ের সঙ্গী | আদিত্য আর বিন্দুর বাড়ির লোকজন এবার দুজনের বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা শুরু করেছেন | বছরে হয়তো তিন চার বার খুব বেশি হলে বিন্দু তার আদিত্যকে দেখতে পায় | সময়ের সাথে সাথে এখন অনেক শক্ত হয়ে গেছে বিন্দু | এখন আর কথায় কথায় আদিত্যর জন্য দুশ্চিন্তায়, ফোনে না পেয়ে, খবর না পেয়ে কেঁদে ফেলে না | সত্যিই তো বীর যোদ্ধার স্ত্রীরও তো বীরের মতোই মানসিক দৃঢতার প্রয়োজন |
****************
আজ সকল থেকেই মনটা কু-গাইছে বড্ড | বড্ড চিন্তা হচ্ছে বিন্দুর ওর আদির জন্য | বিগত দুদিন ধরে কোনো কথাও হয়নি | কিছুতেই নিজের মনকে শান্ত রাখতে পারছে না বিন্দু | কোনো কাজেই মন বসছে না | বার বার হাতের মুঠোফোন টার দিকে তাকাচ্ছে বিন্দু |না এখনো কোনো উত্তর নেই |
****************
বিন্দুর প্রতীক্ষা প্রতীক্ষাই রয়ে গেলো, নিজের আদিকে আর স্বামী রূপে দেখতে পাওয়া হলো না বিন্দুর | আদির কফিন বন্দি দেহটা আঁকড়ে শুধু গলা চিরে চিৎকার করেছিল বিন্দু -” আমিই কেন ঠাকুর, আমিই কেন? ওকে ছাড়া যে বাঁচা অসম্ভব |”
চারপাশের পৃথিবীর সবকিছু থেকে সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত বিন্দু | আদির সাথে বিয়ে হয়নি ঠিকই কিন্তু মনে মনে আদিকেই নিজের স্বামী রূপে মেনে নিয়েছিল সে | তাই ঠিক করলো আদির বিধবা হয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবে বিন্দু |
||৬||
বেশ কিছুদিন কেটে গেছে আদিত্যর মৃত্যুর | বিন্দু কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে | মা বাবা , বিন্দুর মুখের দিকে তাকাতে পারেন না | বিন্দুর সাথে আদির কথা হয় প্রায়ই, স্বপ্নে, রাতের অন্ধকারে ; যখন আর কেউ থাকে না | কাল আদি খুব বকেছে ওর বিন্দুকে – ” তোমায় বলেছি না শক্ত হতে, তুমি কাঁদলে আমার যে কষ্ট হচ্ছে সেটা বুঝছো না তুমি ?”
তাই বিন্দু ভেবেছে এবার থেকে আর কাঁদবে না, আদিত্যর যাতে কষ্ট হচ্ছে সে কাজ বিন্দু মরে গেলেও করবে না |
*****************
বিন্দু মাস্টার্স এর জন্য ভর্তি হলো ইউনিভার্সিটি তে | সেই বাসস্ট্যান্ড থেকেই নির্দিষ্ট দিনে বাস ধরলো স্টেশন যাওয়ার | এই বাসস্ট্যান্ডেই ওর আর আদির প্রেমের শুরুর দিন গুলোর সাক্ষী | ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে থেকেই পড়াশোনা করবে | ব্যাগপত্র নিয়ে স্টেশনে পৌঁছাল বিন্দু , টিকেটের সাথে সিট মিলিয়ে নির্দিষ্ট সিটে বসলো | মা বাবা, আদিত্যের বাড়িরলোক সবাই ছাড়তে এসেছিলেন |
ট্রেন ছেড়ে দিলো | ট্রেনের জানলার খোলা হাওয়ায় উড়ছে বিন্দুর চুল, চোখ বন্ধ করে ওর আদিত্যর কথাই ভাবছিলো | পরের স্টেশনে ট্রেন থামলো | যাত্রীদের হুড়ো-হুড়ির দিকে হাঁ করে তাকিয়েছিলো বিন্দু | এভাবেই তাড়াহুড়ো করে ট্রেন ধরতো আদি , ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল বিন্দু |
“এই যে শুনছেন” একটা পুরুষ কন্ঠে টনক নড়ে | গলাটা কি অসম্ভব চেনা চেনা |
……..”আমি আদিত্য চৌধুরী, এটা আমার সিট |”
নামটা শুনেই বুকটা ধক করে উঠেছিল এক মুহূর্তের জন্য বিন্দুর | পিছন ঘুরে তাকালো বিন্দু, দুটো মানুষের ভিতর এতো মিলও হয়? গলার আওয়াজে , নাম, এমনকি চেহারার গড়নেও |
ব্যাগপত্র নিয়ে ছেলেটি বসলো নিজের সিটে | বিন্দু হাঁ করে চেয়ে রইলো ছেলেটির দিকে |
কথায় কথায় জানতে পারলো ছেলেটিও ওই এক ইউনিভার্সিটির-ই স্টুডেন্ট |
ছুটে চললো ট্রেন | ভাগ্যের কি পরিহাস ! কে জানে আর কোন গল্প লুকানো আছে ভাগ্যের খাতায়?…….