প্রেমের আঁচে

premer-aanche-muktodhara-story-image

premer-aanche-muktodhara-story-image

||১||

“হ্যাঁ দিদি, কেমন আছো বল?”- সেন ব্রাদার্স এন্ড সন্স এর একছত্র অধিপতির স্ত্রী জাহ্নবী সেন কথা বলছে নিজের দিদির সাথে | স্বামী সুদীপ সেন যিনি নাম, যশ, খ্যাতি, বৈভবের উপর বিচরণ করলেও পা রাখেন মাটিতেই | কারণ, অনেক চেষ্টায় শূণ্য থেকে শুরু করে এই অবধি এসছেন,কাজেই বাস্তবতাটা কি, খুব স্বচ্ছ সুদীপের কাছে |.

জাহ্নবী সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর মানুষ | বড়লোক বাবার আদুরে ছোট মেয়ে , বিলাস, বৈভবের মধ্যে বড় হওয়ায় বাস্তবতা অজানাই, তো এহেন জাহ্নবীর প্রেমে পড়ে সুদীপ | জাহ্নবী যথেষ্ট সুন্দরী, প্রেমে না পড়ার কিছু নেই | কিন্তু যে জাহ্নবীর চটক দেখে মন মজেছিল সুদীপ-এর, সেটা এখন অনেকটা ফিকে | জাহ্নবী সুদীপ দুজনই সেটা বুঝতে পারছে |

সুদীপ চায় তার স্ত্রী আর পাঁচটা স্ত্রীর মত স্বামীর একটু খেয়াল রাখুক, ভাল লাগা মন্দ লাগাটা বুঝুক | প্রথম প্রথম সুদীপই অনেক চেষ্টা করেছিল, কিন্তু লাভ হয়নি | জাহ্নবী কোনদিনই সুদীপকে স্পেশাল ফিল করানোর জন্য কোনরকম চেষ্টাই করেনি | বরং মেতে থেকেছে, নিজের কিটি পার্টি, শপিং, সাজগোজ নিয়ে |

সুদীপ বরাবরই চেষ্টা করেছে, কিন্তু এক তরফা কতদিনই বা চলে? এখন সুদীপও নিজের কাজে ডুবিয়ে রেখেছে নিজেকে | সম্পর্কের উষ্নতাটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে |

সুদীপের এই উদাসীন ব্যবহারে এখন জাহ্নবী একটু নড়ে বসেছে | সুদীপকে জাহ্নবী ভালবাসে না বললে মিথ্যা বলা হবে, কিন্তু ভালবাসার মানুষের জন্য কিছু যে করা উচিত এটা বুঝতে ওর একটু দেরীই হয়েছে |

দিদির সাথে ফোনে কথা বলতে বলতেই জাহ্নবী বলল, “আই ডোন্ট নো দি, বাট সামথিং হ্যাজ চেঞ্জড | আই ডোন্ট নো হোয়াট সুড আই ডু নাও |” সুদীপ আর ওর মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে সেই প্রসঙ্গেই এই মন্তব্য |

জাহ্নবীর দিদি পল্লবী চৌধুরী কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য ধারার মানুষ | বড়লোক বাবার মেয়ে হয়েও বাস্তবের থেকে দূরে নন, সেটা তার বয়স আর অভিজ্ঞতার প্রাপ্তি | তাই উনি বোঝেন স্ত্রী ও স্বামীর দুজনেরই দুজনকে বেঁধে রাখার সমীকরণটা | একে অপরের পরিপূরক এই দুটি মানুষ | তাই কর্তব্যটা দুতরফা থেকেই পালন করতে হয় | এক তরফে কিছু হয় না | উনি জাহ্নবীকে এর আগেও এগুলো বোঝাবার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু জাহ্নবী বুঝলে তো |

ওপাশ থেকে পল্লবী বললেন,”যাক দেরিতে হলেও তোর টনক নড়েছে | দ্যাখ তোকে তো অনেক বার বলেছি, অন্যরকম কিছু করার চেষ্টা কর | মেক সামথিং স্পেশাল | ধর, ওকে ওর পছন্দের কিছু বানিয়ে খাওয়ালি |

জাহ্নবী-“দিদি প্লিজ, আমি ঢুকবো রান্না ঘরে?

পলবী-“ব্যস, ভাল, করিস না কিছু | আমায় আর কিছু বলিসও না তবে |”

জাহ্নবী-“কিন্তু আমি তো কিছুই পারি না | কী রাঁধবো?”

পলবী-“দ্যাখ, আমার কথাটা মন দিয়ে শোন- পেটের ভেতর দিয়েও কিন্তু মনে ঢোকা যায় | আর সুদীপ এমনিতেই খাদ্য রসিক মানুষ, কোনোদিনও এতদিনে কিছু করে খাওয়াসনি ওকে, এগুলোও তো ভাবতে হবে | তুই বরং কুকিং ক্লাস জয়েন কর | তুই এখন সুদীপকে কিছু বলিস না, একদম সারপ্রাইজ দিবি ওর জন্মদিনে ওর পছন্দের সবকিছু নিজের হাতে রেঁধে | দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে | যে কোন ভাবেই হোক তুই ওকে বোঝা যে তুই ওকে নিয়ে কতটা ভাবিস, এটাই জরুরি |”

ফোনটা রেখে নিজের ম্যানিকিওর করা হাতটা দেখতে দেখতে ভাবল জাহ্নবী- ‘এই সব রান্নাবান্নার চক্করে ফাঁসলে আর কিছু থাকবে হাতটার? নাকি স্কিনটা ঠিক থাকবে?’ রিমোট নিয়ে অন্যমনস্ক ভাবে চ্যানেল ঘোরাতে লাগল | হঠাৎ, একটা কোনো সিরিয়ালের দৃশ্যে চোখ আটকে গেল | স্বামী-স্ত্রী দু’জেনে একসাথে রান্না করতে করতেটুকরো টুকরো প্রেম দেওয়া নেওয়ায় মগ্ন একে অপরের মধ্যে, কাজ করতে করতে |

কি রোম্যান্টিক না? ভাবতে ভাবতেই জাহ্নবীর মনে হলো- আচ্ছা রূপের ছটা তো ক্ষনিকের, তাহলে এত রূপকে কেন প্রাধান্য দি আমরা? এই মুহূর্ত গুলো তো তার থেকে অনেক বেশি দামী | অনেক ভেবে ও কুকিং ক্লাসে জয়েন করবে ঠিক করলো | দিদি পল্লবীই সব ব্যবস্থা করে দিলেন |

||২||

“নমস্কার, আমিই অর্ঘ্য চৌধুরী |”- নমস্কার জানিয়ে মৃদু হেসে বসতে অনুরোধ জানাল যুবকটি | বয়স খুব বেশি হলে ২৮-৩০, এক কথায় সুদর্শন | পল্লবীই ঠিক করে দিলেন পার্সোনালি এনাকে | শেফ হিসাবে সবে কেরিয়ার শুরু করেছেন, খুব ট্যালেন্টেড | জাহ্নবীর মতো বিগিনারের জন্য একদম পারফেক্ট | কথা বার্তা বলে পল্লবী চলে গেল |

ঠিক হলো প্রতিদিন তিন ঘন্টার ক্লাস, সপ্তাহে তিন দিন করা হবে |

“আপনি হঠাৎ রান্না শিখতে চান কেন? কোন বিশেষ কারণ?” চোখের চশমাটা ঠিক করতে করতে অর্ঘ্য প্রশ্নটা করল |

জাহ্নবী একটু ইতস্তত করে উত্তর দিল, “একচুয়ালি আমার স্বামী খেতে খুব ভালোবাসেন, আর আমি কিছুই রাঁধতে জানি না | আমার স্বামী কিন্তু দারুন রাঁধেন, অনেক খেয়েছি | তাই আমিও এবার শিখতে চাই | আমার স্বামীর পক্ষে অতটা সময় দেয়া সম্ভব না, তাই…”|

“ওকে, ওকে | আসলে যারা খাদ্যরসিক হন, তারা ভালো রাঁধেনও, এটা পরিসংখ্যান বলে | যাই হোক আমরা আজ থেকে শুরু করব নাকী কাল থেকে?” জাহ্নবীকে জিজ্ঞেস করে হাত দিয়ে চুলটা ব্যাকব্রাশ স্টাইলে একটু গুছিয়ে নিল অর্ঘ্য |

জাহ্নবী মাথা নেড়ে উত্তর দিল,”কাল থেকেই তাহলে…”|

অর্ঘ্য-“ওকে নো প্রব্লেম, কাল অনটাইম চলে আসবেন, আমি কিন্তু খুব পাংচুয়াল |”

জাহ্নবী বেরিয়ে এল | গাড়িতে আসতে আসতে, শহরটাকে দেখছিল ও | শেষ পর্যন্ত বয়সে ছোট একজনের কাছে রান্না শিখতে হবে বরের মন পাওয়ার জন্য, কী দুর্গতি | ভেবেই হাসি পেল জাহ্নবীর | গাড়ি দ্রুত গতিতে ছুটে চলল |

||৩||

“আসুন, আসুন, আপনি তো সময়ের বেশ আগেই এসে গেছেন | ভাল,ভাল, বসুন, আমি এক্ষুনি আসছি |” অর্ঘ্য আজ একটা লেমন অরেঞ্জ শার্ট পরেছে, ব্ল্যাক জিন্স, ব্যাকব্রাশ চুল, গালে হালকা দাড়ি, চোখে ব্লু ফ্রেমের হাফ রিম চশমা, সুঠাম গড়ন, পরিষ্কার রং, টিকালো নাক, সুদীপের থেকে একটু লম্বা হবে | নাহ, দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম | বয়স থাকলে ঝাড়ি মারা যেত, এই ভেবে জাহ্নবীর হাসি পেল | জাহ্নবীর ভাবনা থামিয়ে অর্ঘ্য ডাকলো জাহ্নবীকে রান্নাঘরে |

এই প্রথম মনে হয় জাহ্নবী রান্নাঘরে ঢুকল, এর আগে যে কবারই ঢুকেছে, নেহাতই কয়েক সেকেন্ডের জন্য |

“ম্যাম, আপনি আমার স্টুডেন্ট হলেও আমি আপনার থেকে ছোটই হব | তাই আমি ম্যাম-ই বলছি | আপনি আপনার স্বামীর জন্য রান্না শিখছেন, তো সবার আগে রান্নায় যে উপকরণ ta প্রয়োজন, সেটা হল যত্ন | যত্ন দিয়ে সাধারণ জিনিসকেও অসাধারন করে তোলা যায় |” বলেই অর্ঘ্য জাহ্নবীকে কিছু মশলার উপকরণ চেনাতে লাগল প্রাথমিক ভাবে |

‘বাহ্, দারুন কথা বলে তো ছেলেটা | জাহ্নবী কখনো এভাবে ভাবেইনি |’

জাহ্নবীর ভাবনায় ছেদ টেনে অর্ঘ্য বলল, “তবে হ্যাঁ, রান্না করতে গেলে একটু হাত টাত নোংরা হবে ম্যাডাম, সেটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে |”

জাহ্নবী হেসে মাথা নাড়ল |

******************

প্রাথমিক ভাবে কাজ কর্ম শুরু হলো জাহ্নবীর, স্বামী সুদীপকে না জানিয়েই | প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও এখন বেশ মজাই লাগছে | অর্ঘ্য বেশ মজার কথা বলে, পুরো ব্যাপারটাকেই খুব হালকা করে দেয় | শেখাটাও তাই খুব সহজ হচ্ছে | এর মধ্যেই জাহ্নবী বেশ অনেকটাই প্রোগ্রেস করেছে |

ডাল, মশলার নাম, কোনটা কী, এসব কিছুই জেনে গেছে এখন ও, অর্ঘ্যর দৌলতে |

সুদীপ এখনও কিছুই জানে না, জাহ্নবী ওকে একেবারে সারপ্রাইজ দিতে চায় | ওর দৃঢ় বিশ্বাস, ওর এতো এফর্ট দেখে সুদীপ কিছুতেই মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারবে না |

||৪||

“ম্যাম, আপনি ছুরিটা এইভাবে ধরুন, নয়তো কাটতে পারবেন না |”

সবজিপত্র কাটা শেখা চলছে আপাতত | জাহ্নবী তো সেটাও জানে না | কোনভাবেই খোসা ছাড়ানো, কাটাকাটি টা বাগে আসছে না ওর |

হঠাৎ অর্ঘ্য এগিয়ে এসে জাহ্নবীর একদম কাছে এসে দাঁড়ালো | জাহ্নবীর হাতের উপর হাতটা রেখে নিপুণ ভাবে শেখাতে লাগল হেঁসেলের সবজি কাটার কৌশল |

এতটাই কাছে যে অর্ঘ্যর নিশ্বাস ওর মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছিল, ধাক্কা লাগছিলো ওর চুলে | জাহ্নবী হাঁ করে দেখছিল অর্ঘ্যকে | কাজ শেষ হওয়ার পর অর্ঘ্য আর জাহ্নবীর চোখাচোখি, কিছুক্ষন নিস্তব্ধতা | তারপরই অর্ঘ্য সরে যায়, জাহ্নবীও |

****************

সময়ের সাথে সাথে জাহ্নবী আর অর্ঘ্যর বন্ধুত্ব গাঢ় হচ্ছিলই, কিন্তু আজকের পর জাহ্নবীর কোথাও যেন অস্বস্তি আর ভালো লাগা দুটো একসাথে কাজ করছিল |

আস্তে আস্তে ‘ম্যাম’ শব্দটা অবলুপ্ত হয়ে এখন শুধু জাহ্নবী | ক্লাসের ফাঁকে চলে আড্ডা |

অর্ঘ্যর বাড়ির অবস্থা ভাল ছিল না | অর্ঘ্য হাল ধরার পর এখন মোটামুটি স্বচ্ছল | তাই মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর বন্ধন, একে অপরের পাশে থাকা, মূল্যবোধ, এগুলো ভাল বোঝে অর্ঘ্য | প্রেম ভালোবাসার মানেটাও অনেক স্পষ্ট ওর কাছে |

ভালোবাসা মানে স্যাক্রিফাইস, একে অপরের জন্য ভাবা, এসব কিছুই জাহ্নবী জেনেছে অর্ঘ্যর থেকে | এত কম বয়সেও এত গভীরতা কথায়, এত বাস্তববাদী মানুষ যে জাহ্নবী অবাকই হয় | অর্ঘ্য বলে পরিস্থিতি মানুষকে অনেক বড় করে দেয় | হয়তো তাই |

ধীরে ধীরে জাহ্নবীর মনে স্বাভাবিক ভাবেই অর্ঘ্যর জন্য একটা জায়গা হতে লাগল | সেটা নিখাদ বন্ধুত্ব, নাকী ভালবাসা জানে না জাহ্নবী | কিন্তু এখন আগের থেকে অনেক বেশি দায়িত্বশীল আর বাস্তববাদী হয়ে গেছে o |

হেঁসেলের আগুনের আঁচে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছিল অর্ঘ্য আর জাহ্নবীর সুন্দর সম্পর্কটা | জাহ্নবী এখন সময়ের অনেক আগেই ক্লাসে পৌঁছায়, বেরোয় অনেক দেরিতে | অর্ঘ্যকে সবটুকু দিয়ে উপলব্ধি করে জাহ্নবী | অনুভুতিটা হয়তো অন্য প্রান্তেও গড়ে উঠছিল, জানা নেই জাহ্নবীর | হেঁসেলের রান্নার গরম ধোঁয়ায় অনেক গুলো স্বপ্ন একটু একটু করে দানা বাঁধছিল | হোক না অলীক, অথবা বাস্তব, স্বপ্ন বুনতে ক্ষতি কী?

||৫||

সুদীপও যে জাহ্নবীর চরিত্রের এই আমূল পরিবর্তনটা লক্ষ করেনি তা নয় | জাহ্নবী এখন যেন অনেক বেশি ম্যাচিওর | সুদীপ কী চায় না চায়, সেটাও ভাবে | যেটা আগে শুধু সুদীপই ভাবত | এই আমূল পরিবর্তনের পিছনে কে আছে সেটা না জানলেও সুদীপ আরও পরিণত জাহ্নবীকে নিয়ে সত্যিই সুখী | একটু একটু করে ওদের সম্পর্কের উষ্নতাটা ফিরে আসছিল |

***************

জাহ্নবী আর সুদীপ আবার অনেকদিন পর ঠিক আগের মতন, কাছাকাছি | কিন্তু জাহ্নবী চেষ্টা করেও পুরোপুরি খুশি হতে পারছে না কেন? আজ তো ওর খুশি হওয়ার কথা | যার জন্য এত আয়োজন সেই আজ সব থেকে কাছে | কিন্তু তাও জাহ্নবী r মনে একটা দোটানা কাজ করছে | বার বার অর্ঘ্যর কথা মনে পড়ছে | আর তো কটাদিন তারপর তো আর কুকিং ক্লাস নেই, ব্যস | কিন্তু খুশি হতে পারল না জাহ্নবী | অর্ঘ্যর মত এত ভাল একটা বন্ধুর সঙ্গ হারাবে, এটা ভেবেই খারাপ লাগছে ওর | শুধুই কী বন্ধুত্ব, নাকী আরও কিছু?

***************

“জাহ্নবী জলটা আগে শুকোক, তারপর তেল ছাড়ো |”-অর্ঘ্য |

অর্ঘ্যর সাথে গল্পে মত্ত জাহ্নবী জলসমেত কড়াইতেই তেল ছেড়েছে | স্বাভাবিক ভাবেই তেল ফাটতে লাগলো | জাহ্নবী পিছু হটতে গিয়েই অর্ঘ্যর সাথে ধাক্কা খায় | অর্ঘ্যর গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে প্রতিবারের মত এবারও হারিয়ে গেল জাহ্নবী | সে আর অর্ঘ্য আজ বড্ড কাছাকাছি | সমাজের বেড়াজাল ডিঙিয়ে দুটো মানুষ ভালোলাগার বন্ধনে আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে যাচ্ছে | অর্ঘ্যর নিশ্বাস পড়ছে জাহ্নবীর ঠোঁটে, চুলে | দুজন দুজনকে দেখতেই বিভোর | তিরতির করে কাঁপছে দুটো ঠোঁট | অর্ঘ্য ঝটকরে মুখটা সরিয়ে নিল |

জাহ্নবীও কোথায় যেন হারিয়ে গেছিল, আজ বড্ড লজ্জা লাগছে জাহ্নবীর | অর্ঘ্যকে এত কাছের এতটা আপন কবে করে নিয়েছে জাহ্নবী নিজেও জানে না | কিন্তু সুদীপ ওর প্রেম, ওর স্বামী | সুদীপকে ঠকাবে কী করে সে? ছিঃ ছিঃ, এ কী ভুল করতে যাচ্ছিলো আজ ও | সুদীপ ওকে এত বিশ্বাস করে, আর ও এসব… | জাহ্নবী সেদিন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এল |

বড্ড এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আজ সবকিছু | একদিকে সুদীপ, ওদের সংসার, আর একদিকে অর্ঘ্য, নিখাদ, স্বচ্ছ একটা মানুষ | জাহ্নবীর কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সব গুলিয়ে যাচ্ছে আজ | ঠিক-ভুলের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে আজ ও | সুদীপকে ভাল রাখা ওর কর্তব্য, আর কর্তব্য কে উপেক্ষা করা অন্যায় | আর একদিকে অর্ঘ্য আর অর্ঘ্যর বন্ধুত্ব, হয়তো বন্ধুর থেকেও বেশি, যাকে কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারছে না জাহ্নবী |

||৬||

অর্ঘ্য আর জাহ্নবী আজ সামনা-সামনি | জাহ্নবীর আজ লাস্ট ক্লাস, এরপর আর কখনো দেখা হবে না হয়তো | জাহ্নবীর ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে | ও নিজের অজান্তেই যে অর্ঘ্যকে ভালবেসে ফেলেছে | দেখা হোক বা না হোক আর কোনোদিন, ও ওর ভালবাসার অনুভূতি টুকু জানিয়ে যাবে, আর সাথে ধন্যবাদও | আজ অর্ঘ্যর জন্যই জাহ্নবী অন্য একটা মানুষ, যে নিজের স্বামী সংসারকে ভালবাসার, যত্নে সামলে রাখার শিক্ষা দিয়েছে |

“অর্ঘ্য আমি তোমায় ….” জাহ্নবীর গলাটা আজ বুজে এল, বলতে পারল না আর কিছু |

“ভালবাসি” – না বলা কথাটা অর্ঘ্যই আজ বলে দিল |

পরক্ষনেই, উঠে দাঁড়িয়ে, ” তুমি আর এসো না প্লিজ এখানে | আমাদের আর দেখা না হওয়াই ভালো হবে হয়তো, ভালো থেকো |” বলেই জানলার দিকে ঘুরে দাঁড়াল অর্ঘ্য |

জাহ্নবী ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব |

অর্ঘ্য আবার বলল,”পল্লবীদি আমায় অনেক বিশ্বাস করে তোমায় রান্না শেখানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন | আমি পল্লবীদিকে ঠকাতে চাই না, আর তুমিও সুদীপ বাবুর বিশ্বাস ভাঙ্গতে পারো না | ভাল এটাই যে তুমি চলে যাও |”

সত্যিই তো, এতগুলো মানুষের বিশ্বাস ভাঙ্গা যায় না এভাবে | সব কিছু এক লহমায় এলোমেলো হয়ে যাবে যে, জাহ্নবী উঠে দাঁড়ালো,”থ্যাংক্স”, ব্যস এটুকুই বলতে পারল ও | তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এল ও |

অর্ঘ্য আর জাহ্নবীর কাটানো মুহূর্তগুলো ভালো স্মৃতি হয়েই থাকুক ওদের মনে ,কিছু নাহয় না পাওয়াই থাক |

অনুপমের গানটা বাজছে জাহ্নবীর গাড়িতে | জাহ্নবী গাড়ির ব্যাকগ্লাসে দেখল, অর্ঘ্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছে জাহ্নবীর চলে যাওয়া | নাহ, জাহ্নবী আর ফিরে তাকায়নি |

গাড়ি স্টার্ট নিল | ” যেটা ছিল না ছিল না সেটা না পাওয়াই থাক, সব পেলে নষ্ট জীবন… ” -গানের ভলিউম বাড়িয়ে দিল জাহ্নবী | দ্রুতবেগে ছুটছে গাড়ি | সুদীপের জন্মদিন যে আজ |

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

মুক্তি

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল, আকাশ তখন থেকে ঠায় বসেই রয়েছে ঘাটে। এখন বাঁধানো ঘাট থেকে করিডোর হয়ে বাবা বিশ্বনাথের মন্দিরে পুজো দেওয়া অনেকটা সহজ

Read More »

বন্ধু হবি চল

বাক্সপেটরা নিয়ে স্টেশনেই বসে ছিল নয়না, বৃষ্টি পড়েই চলেছে, মুষলধারায়। বাবা বলল আরেকটু অপেক্ষা করতে, এত বৃষ্টিতে তো ছাতাও হার মানবে, আর বেরিয়ে রাস্তাও অজানা

Read More »

টিফিনবাক্স

প্রতিবারের মতন এই বছর ও সমস্ত সরঞ্জাম গুছিয়ে বেরোনোর জন্য ব্যস্ত অমিত, অন্তত সন্ধ্যার মধ্যে বেরোতে না পারলে খুব মুশকিল। পুজোর দিকটা কতদূর কি হলো

Read More »

ক্লিক

।।১।। -“মালিনী, কালকের মিটিংটা কখন ফিক্স করেছ? -“ম্যাম, সকাল ১১টা।” -“ওকে, কনফার্মেশন পেয়ে গেছ?” -“ইয়েস ম্যাম।” -“ওকে গুড। আর।।। এক মিনিট।।।” টেবিল থেকে ফোনটা তুলে

Read More »

শিক্ষা

।।১।। দাপুটে, বদরাগী, মেজাজি এই সব কটা বিশেষণই বেশ ভালো যায় মিসেস বোসের সাথে। রেণুকা বোস আর অমরনাথ বোস সানফ্লাওয়ার এপার্টমেন্টে ১২০০ স্কোয়ারফিটের ফ্ল্যাট 2c

Read More »

বিদায়

।। ১।। রীতিমত জোর করেই নন্দিনীকে পাহাড়ে নিয়ে এলো সঙ্গীতারা। আসার ইচ্ছে তো ছিল না ওর একদমই, শরীর সাথ দিলেও মনটা কোনোভাবেই সাথ দিচ্ছে না।

Read More »

Share with