‘ষড়ভুজ’-পুপাইদের নাটকের গ্রুপটার নাম | ‘পুপাইদের’ মানে, আকাশ, আর আদিত্য, মেঘলা, জাহ্নবী, পিয়ালী, অনিক আর পুপাই নিজে | ওরা সবাই কলেজেই পড়ে, কিন্তু তার সাথে সাথে নিজেদের নেশাটাকে সজীব রাখার জন্য, আর তার সাথে যাদের প্রয়োজন আর্থিক সাহায্যের তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ষড়ভুজের উৎপত্তি | বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওরা পারফর্ম করার ডাক পায় এখন, দীর্ঘ দুই বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ওরা আর ওদের ষড়ভুজ এখন সবার কাছে মোটামুটি পরিচিত |
||২||
একটা নতুন আমন্ত্রণ এসেছে, একটা কলেজের রিইউনিয়নে ওদের পারফর্ম করতে হবে, সেই মতো ওদের নাটকের দলটা মহড়া শুরু করেছে | ওদের কনটেন্ট, স্ক্রিপ্ট সব নিজস্ব, তাই ওদের নাটকের দলটায় একটা স্বতেজতার সাথে সাথে একটা নিজস্বতা আছে, নতুনত্ব আছে আর ডিরেক্ট-এর দায়িত্বটা মোটামুটি পুপাই-ই সামলায় |
এবার যে নাটকটা ওরা পারফর্ম করতে চলেছে, তার নাম, “কথা ছিল হেঁটে যাব”| কাস্টিংও হয়ে গেছে | পুপাই নায়কের ভূমিকায়, নায়িকার ভূমিকায় ঠিক করেছে পিয়ালীকে | মহড়া সেই সকাল থেকে শুরু হয়েছে, একটু রেস্ট নিয়ে খাওয়া দাওয়ার পর পরেরটা শুরু হবে |
হঠাৎ আকাশ দেখল মেঘলা বারান্দায় চুপচাপ বসে, ওর এই মুহূর্তে রোল ছিল না | আকাশ ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াল,”কীরে কিছু হয়েছে?”
মেঘলা একমনে কিছু ভাবছিল, আকাশের কথায় টনক নড়তেই নিজেকে সামলে নিল, “কিছু না রে, বলছি আজ বাড়ি চলে যাব? আজ আমার শরীরটা ভাল লাগছে না রে |”
মেঘলাকে দেখে কিছু একটা হয়েছে আঁচ করেছিলই আকাশ, ও আর কথা বাড়াল না | মেঘলা বেরিয়ে গেল |
||৩||
অটোর ভাড়া মিটিয়ে গলি দিয়ে আনমনে হাঁটছিল মেঘলা, ষড়ভুজের নাটকগুলো, স্ক্রিপ্টগুলো ও-ই লেখে | ঘরে ঢুকে দরজাটা লক করে বসল | আজ বড্ড কষ্ট হচ্ছে, নিজে দিনরাত এককরে পড়াশোনা, নাটক চালাচ্ছে, আকাশ কী বুঝবে না ওকে কোনদিন? ওদের গ্রূপের প্রতিটি নাটকের লেখিকা মেঘলা, প্রতিটি নাটকই মোটামুটি হিট | মেঘলার শয়নে স্বপনে একটাই মানুষ, আর তাকে চিন্তা করেই নিজের সবটুকু দিয়ে, কল্পনাশক্তি দিয়ে চরিত্রগুলো এঁকেছে মেঘলা, সেটা হলো আকাশ | আকাশকে নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালবাসে মেঘলা, হয়তো তার লেখা প্রতিটা নাটকের চিন্তা ভাবনাই আকাশকে কেন্দ্র করে | অথচ আজ অবধি একদিনও নিজের ভালবাসার বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ আসেনি মেঘলার, পার্শ্ব চরিত্রেই থেকেছে সবদিন, মূল চরিত্রে সবসময়ই জাহ্নবী বা পিয়ালীই থাকে | আকাশকে মুখ ফুটে কোনদিনই কিছু বলতে পারেনি মেঘলা, ওর ভালবাসার কথাও না |
****************
আজ মেঘলার শরীরটা তেমন ভাল নেই, তাই কলেজেও গেল না, নাটকের রিহার্সেলেও না | যথারীতি আকাশের ফোন এল,
-“কীরে আজ এলি না যে?”
-“হুমম, শরীরটা ঠিক লাগছিল না, কোন দরকার ছিল কী?”
-“কেন দরকার ছাড়া ফোন করতে পারি না বুঝি?”
-“না করিস না তো, তাই | কিছু বলার থাকলে বল, স্ক্রিপ্ট মেল করে দিয়েছি, আর আমি না থাকলেও রিহার্সাল তো আর আটকাবে না |”, না চাইতেও একটু উদ্ধত ভাবেই, কটু ইঙ্গিতে কথাগুলো বলে ফেলল আকাশকে, বলেই কোনো অপেক্ষা না করে ফোনটা কেটে দিল |
**************
চুপচাপ খাটে শুয়ে সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়েছিল মেঘলা | বাইরে আজ মেঘের তীব্র গর্জন, আর মুষলধারে বৃষ্টি, আকাশ ঘন কালো, জানলার বাইরে কিছু দেখাই যাচ্ছে না, প্রায় ঘোলাটে | মেঘলা ভাবছিল ওর জীবনটাও কেমন যেন অস্পষ্ট, ঘোলাটে, আবছা হয়ে যাচ্ছে দিন দিন | কিন্তু কেন? সেই কবে থেকে ও আকাশকে ভালবাসে , ওকে ভালবেসেই ওর নাটককে ভালবাসা, নিজের লেখনী সত্ত্বাকে পুনরুজ্জীবিত করা | এখন পিছন দিকে তাকালে মনে হয়, কী করছি টা কী? আর কেন? আকাশ কী কিছুই বোঝে না?
*****************
আকাশ মেঘলাকে নিজের পরম প্রিয় বন্ধু হিসাবেই জানে, মানেও, তাই হঠাৎ আজ মেঘলার থেকে এরকম ব্যবহারে খানিকটা বিস্মিতই বটে | সিগারেটের ধোঁয়ার রিং শূন্যে ছাড়তে ছাড়তে মাথামুন্ডু কিছুই মেলাতে পারছিল না আকাশ, মেঘলাকে বিগত ক’দিন অচেনা ঠেকছে | ওর কী কিছু হয়েছে? কী হলো হঠাৎ? মেঘলাকে ফোন করতে গিয়ে নাম্বারটা ডায়াল করেও রেখে দিল আকাশ | দুটো বন্ধুর মধ্যে অদৃশ্য দেওয়ালের উপস্থিতি যেন নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করেছিল |
||৪||
আজকাল মেঘলা আকাশের থেকে বেশ খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখেই চলে, কষ্ট হয় খুব, কিন্তু এটাই ভাল | আকাশের কাছে ও খুব খুব ভাল বন্ধু, কিন্তু মেঘলার কাছে তো আকাশ সবটা, আকাশ হয়তো কোনদিন এসব জানবেও না, বুঝবেও না | শুধু শুধু মেঘলারই কষ্ট বাড়বে, তার থেকে দূরত্বটাই না হয় থাকুক | মনের ভিতর রক্তক্ষরণটা যদি একটু কমে | নিজের কাজে কোনদিন কোন গাফিলতি করেনি মেঘলা, এখন করে না, কিন্তু সবটাই একটা দূরত্ব রেখে |
*****************
রিহার্সাল শেষে বাড়ি ফিরছিল মেঘলা, ঠান্ডা হওয়ার ঝাপ্টা লাগছিল মুখে, যেন একনিমেষে সমস্ত ক্লান্তি শুষে নিচ্ছে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস, সাথে হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির অবাধ্য নিক্ষেপ মুখের উপর | চোখ বুজে প্রকৃতির আদর আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিচ্ছিল মেঘলা নিজের সাথে | হঠাৎই হাতের মুঠোফোনটা বেজে উঠল, ফোনের অপর প্রান্তে আকাশ | আবার মেঘলার হৃৎপিন্ডটা দ্রুত হারে ধুকপুক ধুকপুক শুরু করেছে, ফোনটা ধরল মেঘলা |
-“হ্যালো, কোথায় তুই এখন?”
“কোথায় আবার? রাস্তায়, বাড়ি ফিরছি |”, মেঘলা উত্তর দিল |
-“আজকাল তো তোকে আর পাওয়াই যায় না, সবসময় তোর আদিত্যর সাথেই চিপকে আছিস?”
-“মানে, এসব কী ধরনের কথা? আমি তো আমার সমস্ত কাজ মিটিয়েই বাড়ি ফিরছি, তাহলে তোর প্রব্লেম কোথায়?”
-“কথাটা শুধু কাজের নয়, তুই এখন কাজ ছাড়া আর কিছু নিয়ে কথা বলিস? আমাদের মধ্যে কী শুধু কাজের সম্পর্ক? তুই বদলে গেছিস মেঘলা |”
মেঘলা মনে মনে ভাবল, ‘পরিস্থিতি তো বদলেছেই, মেঘলাই বদলটা করেছে, এছাড়া আর কী-ই বা করতো ও? কিছু বলতে পারছিল না মেঘলা, হঠাৎ দেখল ওর ফোনে আদিত্যর কল ঢুকছে | ও আকাশকে শুধু বলল, “তুই ভুল বুঝছিস আমায়, আমার ফোনে একটা কল ঢুকছে, রাখছি আমি |” বলে কোন উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফোনটা রেখে দিল মেঘলা | আদিত্যর ফোনটা রিসিভ করলো |
||৫||
আকাশ আর মেঘলার সম্পর্কের সমীকরণটা বদলে যাচ্ছিল, আর এই বদলটা শুধু ওরা নয়, ষড়ভুজের অনেকেই অনুভব করছিল | আকাশ মেঘলার মধ্যে আড্ডা, খুনসুটি, সেই সজীবতা, উচ্ছলতা সবকিছুই আগের থেকে বেশ খানিকটা ফিকে | তবে কেউ-ই কারোর বিরুদ্ধে কিছু বলে না কাউকে | কী যে হয়েছে ওদের মধ্যে তা নিয়ে বাকি বন্ধুগুলোর মনে অনেক প্রশ্ন |
আজ রিহার্সালের পর আদিত্যর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল মেঘলা, সামনের আয়নাটা দিয়ে দেখতে পেল আকাশ তাকিয়ে আছে ওর দিকে, মেঘলা জানে না সেই দৃষ্টিতে কী ছিল? কিন্তু বাড়ি ফিরেও আকাশের সেই অচেনা দৃষ্টিটা চোখ থেকে সরাতে পারছিল না মেঘলা | কীরকমই একটা লাগছিল আজ ওর চোখগুলো, যেন আদিত্যর সাথে মেঘলার এত বেশি মেলামেশা দেখে কিছুতেই মানতে পারছিল না আকাশ |
তাহলে কী আকাশ..? না, না, মেঘলা আবারও এরকম ভুলভাল ভাবনাগুলোকে মনে প্রশ্রয় দিচ্ছে, এর আগেও দিয়েছে, নিজেই কষ্ট পেয়েছে | আর না, কিছুতেই না | নিশ্চয় এটাও মেঘলার মনের ভুল, ও-ই খালি ভেবে গেছে যে আকাশও হয়তো ওকে ভালবাসে, আর প্রতিবার নিজের এই ভুল ধারণার জন্য আঘাত পেয়েছে | আর ও কিছুতেই এসব ভাবনা আনবে না মাথায় |
****************
কাল পারফরমেন্স, আজ চূড়ান্ত মুহূর্তের ব্যস্ততা | এই কলেজটা একটু দূরে, মফস্বল এলাকায়, তাই কাল ওদের ভোর ভোরই বেরতে হবে | সবাই গোছগাছ করছিল, ওদিকে যখন যে সিন তার প্রাকটিস চলছে, প্রপগুলো নিয়ে গোছাচ্ছিল মেঘলা | আকাশ ওদিকে মহড়া দিতে ব্যস্ত, কিন্তু চোখ ওর বার বার ঘুরে যাচ্ছিল মেঘলার দিকে, বার বার ভুল হচ্ছিল ডায়লগে, এরকম সচরাচর হয় না | শেষ দৃশ্যটায় ডায়লগের থেকেও বেশি প্রয়োজন ছিল ইমোশনের, কিন্তু কিছুতেই শেষ দৃশ্যটা ঠিক ঠাক হচ্ছিল না আকাশের, ব্যাটে বল-এ কেন যে হচ্ছিল না কে জানে? তখনকার মতো স্থগিত রইল ওটা | গোছগাছ করে, রিহার্সাল মিটিয়ে বেরিয়ে গেল ওরা সব |
||৬||
বাড়ি ফিরে একা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েছিল আকাশ, আজ কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করছে, কেউ যেন খুব কাছের কিছু নিয়ে নিচ্ছে ওর থেকে, এমন কিছু যা সবসময় ওর কাছেই ছিল | তখন বোঝেনি, এখন বুঝছে, উদ্ভ্রান্তের মত লাগছে আজ ওর নিজেকে | এরকম স্টেজে মিস্টেক ওর কখখনো হয় না, আজ কী হলো, ও কিছুতেই কোথাও কনসেনট্রেট-ই করতে পারছে না | কেন এরকম অস্বস্তি হচ্ছে ওর? ওর যে কী হয়েছে ও নিজেই বুঝতে পারছে না | নাকী চারপাশের ভিড়ে মনের কোণের অমূল্য জায়গাটায় কখন অন্ধকার জমেছে খেয়ালই করেনি |
****************
আকাশ তো এরকম পারফর্ম করবার ছেলে নয়, কাল ও ঠিক উতরোতে পারবে তো? যতই হোক, ও তো ওর সবথেকে ভাল বন্ধু, আর এটা ওর স্বপ্ন | সব ঠিক ভাবে হয়ে যাবে তো? এমনই হাজারো চিন্তা পাক খাচ্ছিল মেঘলার মনে | আকাশকে ক’দিন ধরেই কেমন লাগছে, ওর জন্যই কী আকাশ এরকম করছে? পরোক্ষ ভাবে হলেও ও-ই দায়ী তাহলে এসব কিছুর জন্য? খুব অশান্ত লাগছিল নিজেকে, একটা এসএমএস করলো আকাশকে, রাত প্রায় ১টা তখন-“চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে, বেস্ট অফ লাক |”, ভাবেনি মেঘলা এত রাত্রে এসএমএস টা সিন হবে | এখনও জেগে আকাশ? ও তো অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমায় |
ওপ্রান্ত থেকে এল শুধু “হুম |”
||৭||
কাল সারারাত ঘুমোয়নি আকাশ, সারাটা রাত জেগে শুধু ভেবেছে, আর ভেবে আজ ও ওর প্রশ্নের উত্তর যেটা এতদিন ধরে হাতড়াচ্ছিল, যার উত্তরের জন্য ও এতটা উদ্ভ্রান্ত ছিল, সেটা আজ ওর কাছে পরিষ্কার | ও মেঘলাকে আর কারো সাথে সহ্য করতে পারছে না, মেঘলা সমস্ত ইয়ার্কি ফাজলামি শুধু ওর সাথেই মারতে পারে, ব্যস | মেঘলা শুধু ওর, হ্যাঁ শুধু ওর | ওর মনে আর কোন সংশয়, কোন দ্বিধা নেই, আজ সারাটা রাত জাগার পরও ভীষণ শান্ত লাগছে মনটা, ও আজই মেঘলাকে সব খুলে বলবে | মেঘলা ওর কথা ফেলতেই পারবে না |
***************
“জাহ্নবীর মা-এর শরীর ভীষণ খারাপ রে, সিড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে, মনে হয় পা-টা ভেঙেছে, হস্পিটালাইজড |”, অনিকের ফোন পেয়ে মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল আকাশের | জাহ্নবীরই তো প্রধান নায়িকার চরিত্রটায় অভিনয় করবার কথা, এরপর কী হবে? কে করবে? আর তো কোন অপশনও নেই, ডায়লগ তো আর কেউ ঠিক ভাবে জানেই না,পাগল পাগল লাগছিল ওর | এর মধ্যে সবার কাছেই খবরটা পৌঁছে গেছে, কেউ-ই ভেবে পাচ্ছে না কূল কিনারা |
হঠাৎ আকাশের মাথায় এলো, আচ্ছা, পুরো স্ক্রিপ্ট টাই তো লিখেছে মেঘলা, তাহলে এই মুহূর্তে ওর থেকে ভাল আর কে-ই বা হতে পারে? ইনফ্যাক্ট আর কেউ-ই পারবে না | মেঘলা তো সবটাই জানে, ও-ই একমাত্র পারবে উতরোতে | সঙ্গে সঙ্গে ফোন করল আকাশ মেঘলাকে |
***************
আকাশের কোন কথাই মেঘলা কোনদিনই ফেলতে পারেনি, আর আজ তো ফেলার প্রশ্নই আসে না এইরকম একটা সিচুয়েশনে | জাহ্নবীর জায়গায় মেঘ্লাকেই প্লেস করল আকাশ, এই রিস্কটা না নিলে আজ পারফর্মটাই সম্ভব হবে না হয়তো |
||৮||
স্টেজ রেডি | মেঘলা প্রচন্ড নার্ভাস, এভাবে হঠাৎ করে পারফর্ম ও কোনদিনও করেনি, তাও আবার মেন রোলে | ওর ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছে | এখনো খানিকটা সময় বাকি | ড্রেসিং রুমটায় চুপচাপ বসেছিল মেঘলা | হ্যাঁ, ডায়লগগুলো সব ওরই লেখা, কিন্তু তাও…|
আকাশ ঘরে এল একবার,”কীরে নার্ভাস?”
মেঘলা কাঁচুমাঁচু করে বলল,”আমি পারব তো রে?”
আকাশ মেঘলার চোখে চোখ রাখল,বলল,”দ্য শো মাস্ট গো অন, তোর থেকে ভাল আর কেউ পারবে না, আমি এটা এতদিনে বুঝে গেছি |”
আকাশের সেই পাগল করা দৃষ্টিতে কী ছিল মেঘলা জানে না | আকাশ মেঘলার কপালে পরম যত্নে, আদরে সবার অলক্ষ্যে একটা চুমু এঁকে দিয়ে চলে গেল, যাওয়ার সময় শুধু বলে গেল,”আজকের আমার আর তোর পারফরম্যান্স এতদিনের সব পারফরম্যান্স-এর সেরা হবে, দেখিস | আমি সিওর, এতো সিওর আমি এর আগে কখনো হইনি আজ যতটা |”
মেঘলা ধপ করে বসে পড়ল চেয়ারে, ঘরে একলা, আয়নার সামনে | স্টেজে তখন পর্দা উঠব উঠব করছে | একী হচ্ছে ওর সাথে? ওর দেখা স্বপ্নগুলো আজ এক লহমায় এভাবে সত্যি কী ভাবে হয়ে যাচ্ছে? নিজের কপালটার দিকে তাকিয়ে হাত ছোঁয়াল মেঘলা, আকাশের প্রথম স্পর্শ, এ স্পর্শ ভালোবাসার, মেঘলার মনে কী হচ্ছে একমাত্র মেঘলাই জানে |
****************
সামনে অজস্র দর্শক, স্টেজটা আলো অন্ধকার, কিন্তু মেঘলার উপর কী শক্তি ভর করেছে কে জানে | মন্ত্র মুগ্ধের মত একের পর এক ডায়লগ এগোতে লাগল, দৃশ্য পড়তে লাগলো, কোথাও কোন ভয়, দুশ্চিন্তার চিহ্নমাত্রও নেই দুজনের চোখে মুখে, যেন পুরোটাই সহজ ভাবে সাবলীল, ব্যাকস্টেজে ওদের বাকি বন্ধুরাও ওদের পারফরম্যান্স দেখে মুগধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে | একবারের জন্যও আকাশ আর মেঘলা দু’জন দুজনের থেকে চোখ সরায়নি, বা সরাতে চায়নি | কোথা দিয়ে এতটা সময় হুহু করে এগিয়ে গেল ওরা নিজেরাই জানে না | আজকের স্টেজে ওদের ‘অভিনয়’টাই যেন ওদের জীবনের পরম পাওয়াগুলোর মধ্যে একটা, যা অমূল্য | দর্শকাসন হাত তালিতে ফেটে পড়েছে | পর্দা নামলো, অন্ধকার হলো স্টেজে | আকাশ আর মেঘলার ঠোঁটদুটো মিশে গেল একে অপরের সাথে, সবার নজর এড়িয়ে, ঐ স্টেজেই | একমাত্র সেদিনকার স্টেজটাই জানে যে আজকেরটা কোন ‘অভিনয়’ ছিল না, ছিল নিবিড় প্রেম, যা পরিপূর্ন হলো এতদিনে…..|”