||১||
কফিশপে বসে কর্ণারের টেবিলে বসা মেয়েটাকে বার বার দেখছিল সিদ্ধার্থ, না চেয়েও বার বার যেন চোখটা চলেই যাচ্ছে | সিদ্ধার্থ-র বন্ধুরা আসবে, তাই অপেক্ষা করছিল ও, এখনও ওরা এসে পৌঁছায়নি, তাই আপাতত এই কাজটাই মন দিয়ে করছে ও |
খোলা স্ট্রেটেন করা চুল কাঁধ ছাপিয়ে নেমেছে, যা দেখে সিদ্ধার্থ-র পিছলে যাওয়ার অবস্থা | ছিপছিপে চেহারা, টানা টানা চোখ, মেয়েরা এখন কী সব করে স্মোকি টোকি, যাই করুক, বড্ড সুন্দর, বড্ড | একমনে দেখতেই থাকে সিদ্ধার্থ, মেয়েটাও একা, হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে | একবার ভাবলো গিয়ে কথা বলবে, তারপরই ভাবল এটা আবার বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে, তার থেকে থাক, এই ঠিক আছে | কিছুক্ষন পরই একজন ভদ্রলোক এলো, মেয়েটার মুখোমুখি বসায় আর তাকে ঠিক করে দেখতে পেল না সিদ্ধার্থ | তারপর ওর বন্ধুরাও চলে এল, মেয়েটি কিছুক্ষন পর বেরিয়ে গেল, গল্পে গল্পে সময় গড়িয়ে গেল |
****************
তার পর থেকে কয়েকবার এই কফিশপটায় এসেছে সিদ্ধার্থ, আর অদ্ভুতভাবে, একই সময়ে, আর বার বার ঐ মেয়েটিও এসেছে | সিদ্ধার্থ ওর বন্ধুদের সাথে এখানে আড্ডা দেয় কিন্তু মেয়েটি হয়তো কারো সাথে দেখা করতে আসে, তার সাথে দেখা হলেই বেরিয়ে যায় |
বাড়ি ফেরার পথে ভাবলো সিদ্ধার্থ, এটা হয়তো উপরওয়ালারই ইশারা, বার বার দেখা নয়তো কেন করেছে মেয়েটার সাথে, এবার কথা বলতেই হবে | এই ভেবে খাটে ধপ করে শুয়ে পড়ল ও | সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে নাম না জানা রমণীর কথাই ভাবছিল ও, যত দিন যাচ্ছে, তত যেন আরও বেশি বেশি করে ভাল লাগছে ওর | এত সুন্দর যে মনে হয় দেখতেই থাকি | আচ্ছা, মেয়েটা কখনো তো দেখেই না, ও কী বুঝতে পারে না যে সিদ্ধার্থ ওকে দেখছে? নাহ, এবার কথাটা অন্তত বলতেই হবে |
||২||
আজ অবশেষে কথা বলেছে সিদ্ধার্থ, তাই ওর মনটা খুব খুশি , নাম্বারও এক্সচেঞ্জ করেছে, ভাবেনি ব্যাপারটা এত সহজ হবে | আজই সে নাম্বার পেয়ে যাবে সেটাও ভাবতে পারেনি ও, ওর নাম উর্বশী, খুব বেশি কথা হয়নি যদিও, কলেজে পড়ে, ফার্স্ট ইয়ার, এখানে পিজিতে থাকে, বাড়ি বর্ধমান |
****************
উর্বশীর সাথে ফোনে, এস এম এসে একটু আধটু কথা শুরু হয়েছে এখন, ও দিক থেকে যদিও সেরকম কোনো সাড়া নেই, কিন্তু তাও সিদ্ধার্থের মনটা বেশ ভাল লাগে উর্বশীর সাথে কথা বললে | হয়তো মেয়েটা একটু বেশি লাজুক, তাই নাম্বার দিয়েছে বটে, কিন্তু কথা বলতে জড়তাটা কাটছে না এখনও |
****************
এখনই বন্ধুদের কিছু বলেনি সিদ্ধার্থ, টুক টুক করে এগোচ্ছে উর্বশীর সাথে তার সম্পর্কটা, ফোনেই সীমাবদ্ধ এখনও দুজন, ওরা দুজন দুজনকে দেখে সেই একই কফিশপে | একই কর্নার টেবিল, একই পড়ন্ত সোনালী বিকেল, আগে এই বিকেলগুলোর এত গুরুত্ব ছিল না সিদ্ধার্থর কাছে | কিন্তু এখন এই সোনালী বিকেলগুলো যেন প্রেমের বিকিরণ করতে শুরু করেছে সিদ্ধার্থর মনে, দরজায় জানলায় অবিরাম প্রেমের আভা, একটাই নাম উর্বশী |
উর্বশী আজ দুধে আলতা রঙের একটা সালোয়ার পরে এসেছিলো | মনে হচ্ছিলো স্বর্গ থেকে সত্যিই যেন উর্বশী নেমে এসেছে ধরায় | কপালে একটা ছোট্ট টিপ্, হালকা কাজল, খোলাচুলে অপরূপা লাগছিল ওকে | বারবার ওর রেশমের মতো খোলা চুলগুলো আছড়ে পড়ছিল ওর মুখে আর বার বার সেই অবাধ্য চুল সরিয়ে ওর মুক্তোর মতো হাসি, উফফ, পাগল করে দেয় সিদ্ধার্থকে | এবার সিদ্ধার্থকে বলে দিতেই হবে যে ও প্রেমে পড়ে গেছে , ভেবেই যেন অনেকগুলো প্রজাপতি উড়তে লাগল সিদ্ধার্থর পেটে| সুখস্বপ্নে বিভোর সিদ্ধার্থ ঘুমে ঢলে পড়ল, মিটি মিটি তারা আর এক ফালি চাঁদ তাকিয়ে হাসল এক পাগল প্রেমিককে দেখে |
||৩||
আজ ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরিই হলো উর্বশীর, শরীরটাও ভাল লাগছে না | ঘুম থেকে উঠেই সিদ্ধার্থর এসএমএস দেখল, নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে একটা আলতো হাসির রেখা দেখা দিল | “আজ অন্য কোথাও “- অন্য কোথাও দেখা করতে চাইছে সিদ্ধার্থ, কিন্তু কেন? ও কি ওকে …? না না, এসবের সম্ভাবনা আর নেই,ধুর,আর হয় নাকি? উঠে পড়ল উর্বশী |
******************
বিকেল বেলা ময়দানে দেখা করল উর্বশী, মিষ্টি কমলা আর সোনালীতে ঝলমল করছে আজ উর্বশী, সিদ্ধার্থ আবারও ওকে হাঁ করে দেখছিল, সিদ্ধার্থর কাছে এখনও জড়তাটা কাটেনি উর্বশীর, সিদ্ধার্থ আজ পরেছে লেমন অরেঞ্জ শার্ট, বড্ড সুন্দর লাগছে আজ ওর ওকে | বিকেলের মৃদু মন্দ বাতাস দুই তরুণ তরুণীর ভালো লাগার সাক্ষী রইল, বেশকিছুক্ষন পর আমতা আমতা করে সিদ্ধার্থ বলেই ফেলল, ওর মনের কথা …….. জানে একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে, কিন্তু মন যে মানছে না, বলেই উর্বশীর দিকে তাকালো সিদ্ধার্থ, কিন্তু যা এক্সপেক্ট করেছিল উর্বশীর মুখ তো তা বলছে না, তার চোখ এককথা বলছে, মুখের অভিব্যক্তি আরেক | কনফিউজ হয়ে গেল সিদ্ধার্থ, বন্ধুদের এখনও কিছু বলেনি, তাহলে কী তাড়াহুড়োটা বেশিই করে ফেলল ?
“তুমি সময় নিয়ে আমায় জানিও “, এটুকুই বলতে পারল সিদ্ধার্থ | যা যা করবে ভেবে রেখেছিল কিছুই করা হলো না, উর্বশীর জন্য ছোট্ট একটা গিফটও কিনেছিল, সেটাও দেওয়া হলো না ওকে | উর্বশী বড্ড তাড়াতাড়িই চলে গেল আজ, তাহলে কি ওর দিক থেকে কিছুই নেই? কীরকমই যেন একটা ফিলিং এল ভেতর থেকে, যেটা বলে বোঝানো অসম্ভব | একা একা ভবঘুরের মতো হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরল সিদ্ধার্থ |
******************
কাল সারারাত ঘুমোতে পারেনি উর্বশী, কাজও করতে পারেনি কোনও, বার বার সিদ্ধার্থর মুখটা ভেসে উঠছে ওর সামনে | সিদ্ধার্থকে উর্বশীর বেশ ভাল লাগে, হয়তো তার থেকে বেশি কিছুই, কিন্তু জেনে শুনে কি ভাবে ঠকাবে ও ওকে? ছেলেটা খুব ভাল, সৎ অন্তত, এরকম একজনকে কি ঠকানো উচিত? কিন্তু সত্যি বললে এ ভালবাসা কী আর থাকবে? কারো নিঃস্বার্থ ভালবাসাটা হারাতে মন চাইছে না, বড্ড লোভ হচ্ছে কারো ভালবাসা পেতে | কিন্তু শুধু নিজের কথা ভেবে স্বার্থপরই বা হয় কী করে? ভাবতে ভাবতেই ফোন বেজে উঠল কাস্টমারের…………..ঘন্টা, টাকার হিসাব করতে করতে একটু আগের বোনা নিষ্পাপ স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে যাচ্ছিল উর্বশীর |
||৪||
নিঃস্বার্থ ভালবাসা পাওয়ার লোভটা আর সামলাতে পারেনি উর্বশী, স্বার্থপরের মতোই, সবটা লুকিয়ে গেছে ও সিদ্ধার্থের থেকে | ঠকাচ্ছে ও, জানে, তাও যেন সত্যি বলতে চায় না মন, হয়তো বা সাহসে কুলোচ্ছে না | সত্যিটা জানলেই যে ঘেন্নার পাত্রী হবে একলহমায়, কিন্তু এভাবে কতদিন? একটা সত্যিকে চাপা দিতে হাজারটা মিথ্যা কথা বলতে হচ্ছে ওকে প্রতিটা দিন |
একদিন সিদ্ধার্থ প্রশ্ন করল,” আচ্ছা তুমি কফিশপে একেক দিন একেকজন মানুষের সাথে যে দেখা করো, ওনারা কারা?”
এক সেকেন্ডের জন্য চমকে উঠলো উর্বশী, পর্দাটা সরে যাওয়ার ভয়ে, মূল্যবান ভালবাসাটা এই বুঝি হারিয়ে যাবে | পরক্ষনেই সামলে নিয়ে বলল,”আমার কাজের ব্যাপারে, আমার ক্লায়েন্ট |
-“কিসের কাজ? তুমি তো সবে কলেজে পড়ো |”
-“তুমি কী আমায় সন্দেহ করছো?”
-“আমি জাস্ট জানতে চাইছি, এভাবে রিঅ্যাক্ট করছো কেন?”
-“মানে? তুমি সন্দেহ করছো বলেই তো জানতে চাইছ?”
-“আমার কী কিছু জিজ্ঞেস করারও অধিকার নেই?”
কথার উপর কথা বাড়তে থাকে, সিদ্ধার্থ বুঝতে পারে না, সে কী ভুল বলল | বাড়ি ফিরে এসেও নিজের ভুলটা খুঁজে পেল না ও |
****************
বাড়ি ফিরে হাউহাউ করে কাঁদতে থাকে উর্বশী, একী করছে ও? নিজের ভালবাসাকেই এভাবে কষ্ট দিলো ও? সত্যিই তো আসল দোষী ও, আর আজ যখন ওর দোষ থেকে পর্দা উঠে যাচ্ছে, তখন নিজেকে বাঁচানোর জন্য সিদ্ধার্থকে আঘাত করলো ও | ছিঃ ছিঃ ছিঃ, আর কত পাপ করবে?
****************
সারারাত উর্বশীর সাথী থমথমে আকাশ, চোখের জল আর অন্ধকার ঘর | আজ আর কাজে বেরলো না ও | যন্ত্রের মতো পুরুষগুলোর ভোগ্য পণ্য হতে হতে কী ওর মনটাও যন্ত্র হয়ে গেছে? না হলে ও আজ সিদ্ধার্থর সাথে এরকম করলো কী করে? ….নাহ আর না, ও এবার সবটা জানাবেই সিদ্ধার্থকে | মুখে বলার ক্ষমতা না থাকুক, লিখে জানাবে | কিন্তু আর ঠকাবে না, তারপর যা হবে দেখা যাবে | ফোন করে সিদ্ধার্থকে দেখা করতে বলে দিল পরদিন |
||৫||
সেই একই পড়ন্ত বিকেল, মাথার উপর দিয়ে পাখিগুলো ঘরে ফিরছে | কিন্তু আজ যেন চারদিকটা বড় থমথমে, কালবৈশাখীর আগে যেমন হয় তেমনটা | আজকের উর্বশী যেন একদম আলাদা, এলোমেলো চুল, চোখের তলায় কালি, পরিশ্রান্ত চেহারা, আর সিদ্ধার্থর মনে একরাশ প্রশ্ন | শুরুতেই সিদ্ধার্থর হাতে একটা চিঠি ধরালো উর্বশী |
“কী আছে এতে?” – সিদ্ধার্থ |
“আমার তোমাকে বলতে চাওয়া সব কথা, যেগুলো মুখ ফুটে বলার ক্ষমতা জোটাতে পারিনি এতদিন, সেগুলোই লিখে দিলাম |” – উর্বশী |
“দেখি,কী সব যে বলছ?”- সিদ্ধার্থ |
“না, না, এখন না, আমি চলে যাবার পর দেখবে, কেমন? শুধু আমায় ক্ষমা করা যায় কী না দেখো | এর বেশি কিছু বলব না |” – উর্বশী |
কিছুই মাথা মুন্ডু বুঝতে পারছিল না সিদ্ধার্থ | যাইহোক, কথা না বাড়িয়ে কিছুক্ষন পর ওরা বাড়ির পথে হাঁটা লাগাল |
হাঁটতে হাঁটতে সিদ্ধার্থ বলল, “তোমার কী কিছু হয়েছে?”
“নাহ এখনও অবধি ঠিক আছি, কতক্ষন থাকব জানি না |” – উর্বশী |
অসংলগ্ন কথার ভিড়ে উর্বশীর চেনা সৌরভটা কিছুতেই খুঁজে পেল না সিদ্ধার্থ | বাড়ি ফিরেই চিঠিটা পড়তে বসল,
আমার সিদ্ধার্থ,
জানি না তোমায় ‘আমার’ বলার অধিকার আছে কী না, তাও বলার লোভ সামলাতে পারলাম না | এই কথাগুলো অনেক আগেই বলে দেওয়া উচিত ছিল, বলতে পারিনি | বর্ধমানে আমাদের অভাবের সংসার, কলেজে পড়ানোর ক্ষমতা আমার বাড়ির ছিল না, নিজের যোগ্যতায় এতদূর অবধি উঠলাম | একদিন ক্লাসের শেষে থার্মোডিনামিক্সের একটা পার্ট বুঝতে পারছিলাম না | স্যারকে ধরলাম, বললেন,বাড়িতে এসো, ব্যাচে পড়াই | বললাম, টিউশনির টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই | আশ্বস্ত করলেন, ‘ফ্রি’ তে পড়াবেন | ঠিকানা খুঁজে বাড়ি পৌঁছে দেখলাম, আমি একা, আর উনি আর ওনার এক বন্ধু | বার বার ধর্ষিত হয়েছিলাম সেদিন | ক্লান্ত, বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরলাম | মুখ ফুটে সেদিন কাউকে কিচ্ছু বলতে পারিনি | সেদিনের সেই ঘটনার বার বার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল,আমার ও কেমন নেশা লেগে গেল | তারপর উনিই ঠিক করে দেন, এই লাইনে এলে কেউ জানবেও না, আর হাতে অনেক টাকাও পাবি | রাজি হয়ে গেছলাম, দাগ যখন লেগেই গেছে একবার, আর কী?
বাড়িতে টাকা পাঠাতে লাগলাম, বাড়িতেও খুশি,আমারও অভাব ছিল না |
তারপর এলে তুমি, সব ওলটপালট করে দিলে …….এতদিন মন জিনিসটাই ছিল না আমার মধ্যে, তুমি আবার সেটাকে জীবিত করলে | তোমার ভালবাসা পাওয়ার লোভে তোমাকেই ঠকিয়েছি, সত্যিটা লুকিয়ে | বিশ্বাস করো, প্রতি রাতে বিভিন্ন পুরুষের শয্যা সঙ্গিনী হই, কিন্তু মনে শুধু তুমি | বেশ্যার আবার মন, জানি তুমি উপহাস করছ, ঘেন্না করছ | কিন্তু আমি জানি আমি তোমায় কতটা ভালবাসি, নিজেকে তো মিথ্যে বলা যায় না | সকালে সাধারণ স্টুডেন্ট, রাতে বেশ্যা – এর মাঝে আমিও আজ খুব ক্লান্ত | কিন্তু আজ তোমায় সবটা বলে সত্যি খুব শান্তি পেলাম | জানি আমি ক্ষমার অযোগ্য |
ইতি,
উর্বশী |
চোখ, মুখ, কান লাল সিদ্ধার্থর, ঘেন্নায় গাটা রিরি করতে লাগল | এত ভুল করল ও একটা মানুষকে চিনতে? শেষ পর্যন্ত প্রস্টিটিউড? ছিঃ ছিঃ, নিজের উপর ঘেন্না হচ্ছে সিদ্ধার্থর | ছুঁড়ে ফেলে দিল চিঠিটা, গা টা গুলাচ্ছে ওর | উর্বশী বার বার ফোন করছে | ফোন কেটে দিল সিদ্ধার্থ, চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ওর | আমিই কেন? কেন? এত নোংরা, বিশ্বাস ঘাতক, লোভী মেয়েকে কী করে ভালবাসলাম আমি? ছিঃ |
বার বার ফোন আসায় কেটে এসএমএস করে দিল সিদ্ধার্থ ,”এত টাকার লোভ তোমার যে নিজের আত্মসম্মানের সাথেও আপোষ করে নিলে? তুমি তো তাহলে সব করতে পারো | ঘেন্না ছাড়া আর কিছুই করতে পারব না তোমায় |” – লিখে পাঠিয়ে দিয়ে ফোন অফ করে দিল | একটু একা থাকতে চায় ও এখন, সব কিছু থেকে দূরে, একটু নিরিবিলিতে চোখ বুজে |
||৬||
ঘটনার তিনদিন কেটে গেছে, সিদ্ধার্থ বাড়ি থেকেও বেরোয়নি, কারও সাথে কথাও বলেনি | তিনদিন পর ফোনটা অন করল | অসংখ্য এসএমএস, মিসড কল, উর্বশী বার বার ক্ষমা চাইছে | সিদ্ধার্থ পারছিল না আর নিজেকে সামলাতে, হাউহাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ল | ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে আজ ও, শেষ হয়ে যাচ্ছে | কাকে বলবে? কী বলবে? ভালবাসে ও উর্বশীকে, সেটা তো অস্বীকার করা যায় না | এতদিন ধরে এটাই উপলব্ধি করেছে ও যে উর্বশীকে ছাড়া বাঁচা ওর পক্ষে অসম্ভব | ও যেমনই হোক, যেই হোক, ও ওর উর্বশী | অতীতটা না হয় কাদা মাখা, ভবিষৎ তো সুন্দর হতেই পারে |
হ্যাঁ, এসব শোনার পর রিঅ্যাক্ট করাটা কি খুব অস্বাভাবিক? ও-ও তো মানুষ, অনেক ভেবে উর্বশীকে ফোন করল সিদ্ধার্থ |
******************
সত্যিইতো , ঘৃণার পাত্রীই তো ও আজ | এটা তো হওয়ারই ছিল, কিন্তু সিদ্ধার্থকে ও যে বড্ড ভালবেসে ফেলেছে | এখন ওকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব, ও-ই নেই যখন তখন বেঁচে কি লাভ? বাথরুমের শাওয়ার এর তলায় বসে এটাই ভাবছিল উর্বশী, এই দাগ শরীর থেকে আর তো উঠবে না | ভাবতে ভাবতেই ব্লেডটা হাতে নীল উর্বশী, ফোনটা তখন ভাইব্রেশন মোডে, সিদ্ধার্থর ফোনটা শাওয়ার এর জলের আওয়াজে শুনতেও পেল না উর্বশী |
হাসি মুখে নিজের হাতের শিরাটা কেটে দিল………. বাথরুমের জল লাল-এ রূপান্তরিত হতে শুরু করলো, চোখটা আবছা হওয়ার আগের মুহূর্তে চোখ পড়ল ফোনটার স্ক্রিনে সিদ্ধার্থের নামটা | রিসিভ করলো ফোনটা |
ফোনের ওপর থেকে সিদ্ধার্থ,” হ্যালো, হ্যালো, উর্বশী |”
“বলো “, ক্লান্ত কন্ঠে কোনভাবে উত্তর দিল উর্বশী |
“আমায় ক্ষমা করো, আমি ঐভাবে রিঅ্যাক্ট করে ফেলেছিলাম | সত্যিটা মানতে সময় লেগে গেছে একটু আমার | সরি, প্লিজ বলো কখন দেখা করবে, আমি তোমার সাথেই জীবনের পথ চলতে চাই |” – সিদ্ধার্থ |
“অনেক দেরি হয়ে গেছে সিদ্ধার্থ “………. বলেই লুটিয়ে পড়ল বাথরুমের মেঝেতে উর্বশী | একটু একটু করে চোখ দুটো বুজে এল, মুখের হাসিটা কিন্তু মিলোয়নি |
“হ্যালো, কিসের দেরী, কোনো দেরী না, আমি এখুনি আসছি, বল কোথায় দেখা করবে, হ্যালো,হ্যালো ,উর্বশী, হ্যালো …..”
কে দোষী ছিল ?উর্বশী? সিদ্ধার্থ? এই সমাজ? কে?