বৈধ-অবৈধ

boidho-aboidho bengali story image

 boidho-aboidho bengali story image

“কি হলো? কথা কানে যাচ্ছে না ? গরম করে আন চা-টা “,বলেই চায়ের কাপটা সশব্দে রাখলো অতনু |

“এখুনি আনছি”-বলেই চা-র কাপ নিয়ে মাথা নিচু করে রান্না ঘরে চলে গেলো দিশা, মিঃ অতনু চৌধুরীর স্ত্রী | যদিও স্ত্রী টা নামেই | কোনোদিনই স্ত্রীর মর্যাদা, সম্মান, ভালোবাসা পায়নি দিশা | উল্টে দিন রাত পতিসেবা করেও জুটেছে অসম্মান |

অতনু দিশার অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ | পাঁচ বছর হলো ওদের বিয়ে হয়েছে | এখন বাগুইহাটির একটা ফ্ল্যাটে থাকে ওরা | ওদের একটা ছোট্ট মেয়ে আছে অদ্রিজা | এই অদ্রিজার মুখ চেয়েই বেঁচে থাকা দিশার | নয়তো এই সংসারে আর কোন টান টাই বা আছে |

অদ্রিজাকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করা হলো | বাড়িতে টিউটর-এর প্রয়োজন | অতনুর মতে দিশার মতো মানুষের কোনো যোগ্যতাই নেই অদ্রিজাকে পোড়ানোর | দিশা কোনোদিনই কিছু বলেনি, আজও বললো না | টিউটরের ব্যবস্থা হলো | ওর কাজ শুধু তাকে সঠিক সময়ে চা-জল খাবার পৌঁছে দেওয়া |

আগে বাড়ি ফিরে মদ্যপ অবস্থায় অতনু নিজের বিকৃত যৌনইচ্ছা চরিতার্থ করতে দিশার ওপর অত্যাচার করতো | কিন্তু এখন সেটা অন্তত বন্ধ হয়েছে | অদ্রিজা এখন ছোট | ও এখনো কিছু বোঝে না | কিন্তু ও যখন বড় হবে, তখন ওর বাবা কিরকম মানুষ সেটা তো নিজের চোখেই দেখবে, তখন কি হবে? এসব ভেবেই দিশার ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে |

অদ্রিজার ছোট্ট থেকেই লেখাপড়ার খুব আগ্রহ | ও বড় হোক, মানুষের মতো মানুষ হোক | ব্যস, এটুকুই দেখে যেতে চায় দিশা |

আজকাল দিশা অতনুর জামা প্যান্টের পকেট থেকে এমন অনেক কিছুই পাচ্ছে, যাতে এটা স্পষ্ট যে অতনুর অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে | দিশা এসব কথা লজ্জাতে কাকেই বা বলবে ? বাড়িতে বললে একই কথা বলবে যে মেয়েদের একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিতেই হয় |

দিশা সব কষ্ট, যন্ত্রনা নিজের মনেই লুকিয়ে রাখে আর চোখের জল ফেলে | হয়তো ওর এই অবস্থার জন্য ও নিজেই দায়ী | ও যদি নিজে প্রতিষ্ঠিত হতো আর প্রথম থেকেই রাশ টেনে ধরতো তাহলে হয়তো পরিস্থিতি অন্যরকম হতো |

বিয়ের প্রথমে ভাবতো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে | সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করতো অতনুর মন জয় করার, কিন্তু কিছুই লাভ হয়নি |

মেয়ে হওয়ার পর ভাবল, এবার হয়তো পরিস্থিতি বদলাবে কিন্তু কোনোকিছুই দিশার ভাগ্যের অমাবস্যা কাটাতে পারেনি |

অদ্রিজার প্রাইভেট টিউটর যিনি ভারী ভালো আর মজার মানুষ | চা-জল খাবার দিতে গিয়েই যেটুকু আলাপ তাতেই দিশার মানুষটাকে বেশ মজার লেগেছে |

দিশার রান্নার হাত বরাবরই খুব ভালো, কিন্তু অতনু কোনোদিনই সেই প্রতিভার প্রশংসা করেনি | মা জেঠিমা বলেছিলো, স্বামীর পেটের মধ্যে দিয়ে ঢুকে মনের মধ্যে ঢুকতে হয় | কিন্তু তাতেও ব্যর্থ দিশা |

*******************

 শীত পড়েছে, কড়াইশুঁটির কচুরি আর আলুর দম বানিয়েছে আজ দিশা | অদ্রিজা এটা খুব ভালোবাসে, ওর আব্দারেই তো এসব করা | আজ জল খাবারে অদ্রিজার টিউটর উজানবাবু-কেও কচুরি আলুর দমই খাওয়ালো দিশা | উজানবাবু তো খেয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ | অনেকদিন পর নিজের প্রশংসা শুনে যেন নিজেরই অবাক লাগছিলো দিশার |

রাত্রে অতনু-কে খেতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”ভালো হয়েছে?”

টি.ভি-র পর্দায় চোখ রেখে অতনু উত্তর দিলো,”হুম “| দীর্ঘ শ্বাসের কোনও শব্দ হয়না, তাই অতনু শুনতে পেল না |

******************

( কিছুদিন পর….. )

আজ অতনুর পকেট থেকে কন্ডোমের প্যাকেট পেয়েছে দিশা | ‘এতদূর !’ ঘেন্নায়, লজ্জায় নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে আজ | অতনু অফিস ট্যুরে যাবে বলে তিনদিনের জন্য চলে গেলো |

দিশা জানে অতনু কোন অফিস ট্যুরে যাচ্ছে না | এভাবে কি বাঁচা যায় ? ভাগ্যিস ছোট্ট অদ্রিজা আজ বাড়ি নেই, মামাবাড়ি গেছে হঠাৎ, নাহলে অদ্রিজাকে আজ কি বলত? কেন এত কাঁদছে? হঠাৎ বেল বাজলো | চমকে উঠলো দিশা | এখন তো কারও আসার কথা নয় | ভাবতে ভাবতেই দরজার কি-হোল দিয়ে দেখল দিশা | উজান বাবু এসেছেন| ইস উজান বাবুকে তো জানানোই হয়নি অদ্রিজা মামাবাড়ি গেছে |

খুবই অপ্রতিভ হয়ে দরজা খুললো দিশা | উজান দিশার মুখ দেখেই বললো,”আপনার কি কিছু হয়েছে?”

” আরে না না, একটু ঠান্ডা লেগেছে | আপনি বসুন |”-দিশা |

” ঠান্ডা লাগা আর অকাল বর্ষণের পার্থক্য জানি ম্যাডাম |”-উজান |

” আমি খুবই লজ্জিত আপনাকে জানানো হয়নি, অদ্রিজা মামাবাড়ি গেছে |”-দিশা |

” আচ্ছা আচ্ছা, সে ঠিক আছে | তা এক কাপ চা পাওয়া যাবে কি?”-উজান |

” আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, প্লিজ আপনি বসুন, আমি এখুনি আসছি |”-দিশা |

কিছুক্ষনের মধ্যে, চা আর সিঙ্গাড়া নিয়ে দিশা ঘরে ঢুকলো |

” আরে বাবা শুধু তো চা চাইলাম, আর আপনি কান্নাকাটি করতে করতেও রাঁধতে পারেন?” বলে দিশার হাতের গরম সিঙ্গাড়ায় একটা কামড় বসালো উজান |

” আপনাকে কে বললো আমি কাঁদছিলাম?”-দিশা |

” কারও বলার দরকার নেই ম্যাডাম | একটু পর্যবেক্ষন ক্ষমতা থাকলেই সেটা বোঝা যায় | ভয় নেই, কেন কাঁদছিলেন এমন প্রশ্ন আমি করবো না | বরং বলবো কাঁদতে যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করুন |”-উজান |

” আপনি খুব ভালো কথা বলেন তো | ঠিকই ধরেছেন, মানুষ যখন নিজের আত্মসম্মানটাই হারিয়ে ফেলে, তখন আর কি কিছু থাকে?”-দিশা |

” একদম ঠিক, আত্মসম্মান না থাকলে তো মরেই যাওয়া উচিত | যার সম্মান নেই সে বেঁচে কি করবে?”-উজান |

” মানে? আপনি আমায় সুইসাইড করতে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন নাকি?”- দিশা |

” আরে না না ম্যাডাম, এত ক্ষমতাও নেই আমার | আমি শুধু এটুকু বলছি, আপনি যখন এখনো বেঁচে আছেন তখন নিশ্চই তার কোনো কারণ আছে | তো সেই বেঁচে থাকার কারণটা খুঁজে বের করুন, তাহলেই বেঁচে থাকার রসদটাও খুঁজে পাবেন |”- উজান |

” মানে? এত ভারী ভারী কথা আমার মাথায় ঢুকছে না | আমার বেঁচে থাকার কি কারণ থাকতে পারে?”- দিশা |

” আপনাকে ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে হবে, তাকে একটা সুস্থ ভবিষৎ দিতে হবে | এর থেকে বড় আর কি কারণ হতে পারে ? আর ভনিতা না করেই বলি, একই পাড়ায় থাকি, সবই জানি শুনি, কানে আসে, তাই নিজের মেয়েকে একটা সুস্থ পরিবেশ দিন বাঁচার | এটাই আপনার প্রধান কাজ হওয়া উচিত |”- উজান |

নিজের লোক দেখানো মরীচিকার মতো সুখের সংসারের আসল খোলসটা বেরিয়ে পড়ছে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল দিশা | সেটা বুঝে উজান বলল,” থাক, আসি আজ তাহলে, নমস্কার |”

” নমস্কার “- দরজা বন্ধ করল দিশা |

উজান বাবু কত সহজে কত বড় বাস্তবতা বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন | সারারাত তার এ কথাগুলোই ঘুরতে লাগল দিশার মনে | সত্যিই তো, একে কি বেঁচে থাকা বলে ? ওকে যেভাবেই হোক নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে | তাহলেই একমাত্র ও অদ্রিজাকে নিয়ে এই নরক থেকে বেরোতে পারবে |

কীন্তু কিভাবে? ও তো খুব বেশি লেখা-পড়াও করেনি, উচ্চমাধ্যমিক পাশ, আর এত স্মার্টও নয় |

পরদিন অদ্রিজাকে যখন উজান বাবু পড়াচ্ছিলেন, তখন চা জল-খাবার দিতে গিয়ে দিশা হেসে উজান বাবুকে নমস্কার করল |

” কী? শ্রাবনের কালো মেঘ কাটলো তাহলে |” – উজান |

দিশা হেসে বলল,” আজ যাওয়ার সময় আপনার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে | দয়া করে একটু যদি…”|

” নিশ্চই “- উজান |

*******************

 উজান আর দিশা মুখোমুখি ওদের ব্যালকনিতে, টি-টেবিলে | ছোট্ট অদ্রিজা মা’র পাশে |

” আচ্ছা আপনি কোন কাজটা ভালো করেন বলুন তো ?”- উজান |

” আমি তো কিছুই তেমন পারি না | সামান্য উচ্চমাধ্যমিক পাশ, বিয়ের পর থেকে…..” দিশাকে থামিয়ে দিয়ে উজান বললো,” ওয়েট ওয়েট, আরে ম্যাডাম আপনি তো অসাধারণ রাঁধেন | এত বড় প্রতিভা আর আপনি বলছেন কিছু পারিনা ?”

” রান্না? রেঁধে কী হবে উজান বাবু? রান্নায় তো আর পেট চলবে না |”- দিশা |

” চলবে না মানে? দৌড়বে, আপনি হোম ডেলিভারির ব্যবসা খুলুন |”- উজান |

” ব্যবসা? আমি? আপনার কী মাথা খারাপ হয়েছে?”- দিশা |

” আমার মাথা একদমই ঠিক আছে আর আমি ভেবেই বলছি আপনার এর থেকে ভালো আর কোনো অপশন হতেই পারে না | আরে তুখোড় হাত আপনার | আপনি ফিল্ড-এ নামলে তো সব বাকি কম্পিটিটর উড়ে যাবে ম্যাডাম |”- উজান |

” কিন্তু এত মূলধন কোথায়? আর এরকম একটা ব্যবসার কাজ সামলানো……” দিশা |

” আপনি রাজি কী না বলুন | মূলধন বা বাকি সব বন্দোবস্ত আমি করব | আপনি ভিতরটা সামলান, বাকিটা আমি দেখছি |”- উজান |

অনেক ভেবে দিশা বলল,” আমি কিন্তু শুধু রান্নাটাই করতে পারি |”

” আরে ওটাই করুন আপনি মন দিয়ে | ওটাই তো আসল | বেশ, আমি একটু এটা নিয়ে এগোই | কিছুদিনের মধ্যে আপনাকে নিয়ে আরেকবার বসছি আলোচনায় |”- উজান |

ছোট্ট অদ্রিজা আনন্দে লাফিয়ে উঠলো, ” কী মজা, কী মজা, মা আমার শেফ হবে, কী মজা |”

কিছুদিনের মধ্যেই হর-গৌরী হোম ডেলিভারি স্টার্ট হলো | রান্নার পুরো দায়িত্ব দিশার, ক্যাপিটাল বা ডেলিভারির পুরো দায়িত্ব উজানের | নামটা দিশাই রেখেছে |

পুরোটাই অতনুর চোখের আড়ালে | অতনু সকালে বেরিয়ে যাওয়ার পর অখণ্ড অবসর ছিল দিশার, সে সময়ই দিশা সঁপে দিলো নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে |

অচিরেই দিশার হাতের রান্না বাজিমাত করতে লাগল, ব্যবসা বাড়তে লাগল | দিশার মনে মনোবল এখন আগের থেকে অনেক বেশি | আর আজ ও এতদূর এগিয়েছে তার জন্য সমান ভাবে পরিশ্রম করেছে উজান, একজন সত্যিকারের বন্ধুর মতোই |

আপনি থেকে সম্ভাষণ এখন তুমি তে নেমে এসেছে | উজান বাবু থেকে এখন উজান বলেই ডাকে দিশা |

উজান দিশার জীবনে কোনো ফরিস্তার থেকে কম কিছু নয় | ব্যবসাটা আরেকটু স্টেবল হলেই দিশা অদ্রিজাকে নিয়ে একটা ভাড়া বাড়িতে উঠে যাবে | এখন তো অতনুর ঔদ্ধত্য এতটাই বেড়েছে যে ঘরে থাকাই দায় |

 এভাবেই বেশ ক’মাস চলে গেল | দিশা উজানকে বলল,” আমায় একটা ভাড়া বাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে?”

উজান চা খেতে খেতে চমকে-“ভাড়া বাড়িতে কেন?”

দিশা-” আমি এবার অদ্রিজাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যেতে চাই | অতনুর অত্যাচার আর সহ্য করা যাচ্ছে না |”

উজান সরাসরি দিশার দিকে তাকিয়ে বলল,” দেখো দিশা, আমি কোনোদিনই ভনিতা বা ন্যাকামো করতে পারি না | সরাসরি তাই বলছি, ভরসা করে কী আমার হাতটা ধরা যায় না? তোমায় আর অদ্রিজাকে ভালোরাখার সব দায়িত্ব আমি নিতে চাই |”

রাগে দিশার মুখটা লাল হয়ে উঠল | ” তোমায় বন্ধু ভেবে ভরসা করেছি মানে এটা না যে এখন তুমি আমার উপর অধিকার ফলাবে | অতনু যেমনই হোক আমার স্বামী, আর আমি কারও বিবাহিতা, তারপরও তোমার এধরণের কথা বলতে বাধল না? “- বলেই সশব্দে দিশা চেয়ার থেকে উঠে কফিশপ ছেড়ে বেরিয়ে গেল | উজানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই |

*****************

 কয়েকদিন ধরেই উজান কতবার ফোন করছে দিশাকে, দিশা ফোন ধরেনি | নিজেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলেছে দিশা সবার থেকে | উজানকে ও ওর সবথেকে বড় বন্ধু ভেবেছিল, কিন্তু সব বন্ধুত্বই কী প্রেম হতে হবে? দ্বিধায়, হতাশায়, যন্ত্রণায় বিহ্বল হয়ে গেল দিশা |

সকালে অতনুর ব্রেকফাস্ট গুছিয়ে থালায় ভাত বাড়ছিল দিশা | অন্যমনস্ক থাকায় নিজের কাজে খানিক ত্রুটি থেকে গেছিল | অতনু চেঁচিয়ে উঠলো, “মনটা কোথায় থাকে? নুনের ওপরেই ভাত দিয়ে দিছো? কেন পীরিতের নাগর-এর সাথে ঝগড়া হয়েছে বুঝি |”

” মানে?” অবাক হয়ে অতনুর দিকে তাকাল দিশা -“এসব কী ধরনের কথাবার্তা?”

” যা বলছি ঠিকই বলছি, একদম ন্যাকা সাজবে না | তুমি কী ভাব আমার কানে কিছু আসে না, না কিছু বুঝতে পারছি না |”- অতনু |

” তোমার সাথে এসব নোংরা ব্যাপার নিয়ে কথা বলতেও আমার ঘেন্না করছে |”- দিশা |

” তুমি করতে পারো, ঘেন্না না, আর আমি বললেই দোষ?” বলেই অতনু ওর গায়ে হাত তুলতে গেল |

অতনুর হাতটা এক লহমায় আটকে অতনুর চোখে চোখ রাখলো দিশা | সেই দৃষ্টি ওর চোখে কখনো দেখেনি অতনু | ও বুঝতেই পারল না এত জোর দিশার আসছে কোথা থেকে?

“অনেক সহ্য করেছি, আর না | আমার গায়ে আর একবারও হাত তোলার চেষ্টা করলে আমি কিন্তু পুলিশে যাবো | আর আমি অদ্রিজাকে নিয়ে খুব শিগগিরই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব ভেবেছিলাম | আজ সেই সময় এসে গেছে | তোমার অনেক নষ্টামী, নোংরামি আমি সহ্য করেছি, আর করব না | এই চোখের আগুন একদিনে আসেনি অতনু | অনেক কষ্টে এসেছে |”

অতনু অবাক হয়ে দিশার দিকে চেয়েছিল, দিশা থামতে বলল, ” মেয়েকে খাওয়াবে কী? মুরোদ আছে কোনো?”

” আমার মেয়েকে সুষ্ঠ ভবিষৎ দেয়ার জন্য আমার তোমার কোনো সাহায্য প্রয়োজন নেই আর অতনু | আমি আমার উপার্জনেই সেটা করতে পারব | হর-গৌরী হোম ডেলিভারিটা আমিই চালাই | আর এখন উপলব্ধি করছি আমারও সুখী হওয়ার অধিকার আছে | সমাজে তোমার মত মানসিকতার কিছু মানুষ এটাকে অবৈধ নোংরামির তকমাই দেবে, জানি | কিন্তু তোমার মত নোংরা লোক যে শুধু শরীরটাই বোঝে,তাই কাউকে ভালো না বেসেই তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে পারে,সে আর যাই হোক ভালোবাসাটা কী বুঝবে না | অপবিত্র তো আমি সেদিনই হয়ে গেছি যেদিন তোমার মত পিশাচ আমায় ছুঁয়েছিল, ভালো না বেসে, আর আমি সব অত্যাচার সহ্য করেছিলাম | এই অপবিত্রতা এবার ঘুচবে আর একটা সুন্দর সম্পর্ককে মর্যাদা দিয়ে | আর এই সম্পর্কটাই আমার কাছে সব চেয়ে বেশি বৈধ”- এতটা বলে দিশা থামল |

অতনু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে অগ্নিমূর্তির দিকে | মাথা নীচু করে অতনু ঘর থেকে বেরিয়ে গেল | দিশা উজানের ফোনটা ধরল, “হ্যালো”|

” হ্যালো, কী ব্যাপার দিশা? সব ঠিক আছে তো? ফোন কেন ধরছিলে না?”

” উজান, অদ্রিজা কি অতনু আর দিশার নয়, উজান আর দিশার মেয়ে হয়ে বাঁচতে পারে?”

একটু স্তব্ধতার পর উজান কান্না জড়ানো গলায় বলল, ” পারে, নিশ্চই পারে, আমি সব দিন তোমার পাশে আছি দিশা |”

দিশা-” বাড়ি বদল করবার সময় হয়ে গেছে উজান, আর বাকী অস্তিত্বের লড়াইটা না হয় আমরা দুজন একসাথেই লড়ব |”

উজান-” আমি এখুনি আসছি |”

দিশা ফোনটা রাখল, এবার কালো মেঘ সরে সূর্যের কিরণ দেখা যাচ্ছে | আর কোনো ভয় নেই | আত্মবিশ্বাসে হাসল দিশা, ছোট্ট অদ্রিজাকে কোলে নিয়ে অনেকদিন পর |

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

মুক্তি

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল, আকাশ তখন থেকে ঠায় বসেই রয়েছে ঘাটে। এখন বাঁধানো ঘাট থেকে করিডোর হয়ে বাবা বিশ্বনাথের মন্দিরে পুজো দেওয়া অনেকটা সহজ

Read More »

বন্ধু হবি চল

বাক্সপেটরা নিয়ে স্টেশনেই বসে ছিল নয়না, বৃষ্টি পড়েই চলেছে, মুষলধারায়। বাবা বলল আরেকটু অপেক্ষা করতে, এত বৃষ্টিতে তো ছাতাও হার মানবে, আর বেরিয়ে রাস্তাও অজানা

Read More »

টিফিনবাক্স

প্রতিবারের মতন এই বছর ও সমস্ত সরঞ্জাম গুছিয়ে বেরোনোর জন্য ব্যস্ত অমিত, অন্তত সন্ধ্যার মধ্যে বেরোতে না পারলে খুব মুশকিল। পুজোর দিকটা কতদূর কি হলো

Read More »

ক্লিক

।।১।। -“মালিনী, কালকের মিটিংটা কখন ফিক্স করেছ? -“ম্যাম, সকাল ১১টা।” -“ওকে, কনফার্মেশন পেয়ে গেছ?” -“ইয়েস ম্যাম।” -“ওকে গুড। আর।।। এক মিনিট।।।” টেবিল থেকে ফোনটা তুলে

Read More »

শিক্ষা

।।১।। দাপুটে, বদরাগী, মেজাজি এই সব কটা বিশেষণই বেশ ভালো যায় মিসেস বোসের সাথে। রেণুকা বোস আর অমরনাথ বোস সানফ্লাওয়ার এপার্টমেন্টে ১২০০ স্কোয়ারফিটের ফ্ল্যাট 2c

Read More »

বিদায়

।। ১।। রীতিমত জোর করেই নন্দিনীকে পাহাড়ে নিয়ে এলো সঙ্গীতারা। আসার ইচ্ছে তো ছিল না ওর একদমই, শরীর সাথ দিলেও মনটা কোনোভাবেই সাথ দিচ্ছে না।

Read More »

Share with